জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও অবিরত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়ার ফলে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে যে সক্ষমতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে তা নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) মতো মহামারী মোকাবেলায় কাজে লাগছে। জাতিসংঘে চলমান উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে (এইচএলপিএফ) এক ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টে এ কথা বলেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
‘কভিড-পরবর্তী বিশ্বে অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানো: নবতর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয় জনগণ সম্পৃক্ত জলবায়ু নীতি ও কর্মপরিকল্পনা’
শীর্ষক এ ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টটির সহআয়োজক ছিল বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া, ভুটান এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি)। নেদারল্যান্ডসের ভাইস মিনিস্টার রোয়াল্ড ল্যাপ্পিরি, আইএফআরসির জাতিসংঘে স্থায়ী পর্যবেক্ষক ও প্রতিনিধি দলের প্রধান রিচার্ড ব্লিউইট, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক এবং ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. সালিমুল হকসহ বিভিন্ন স্থায়ী মিশন, জাতিসংঘ সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা ইভেন্টটিতে অংশ নেন।
কভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন উভয়কেই জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের জন্য, বিশেষ করে যেসব দেশে আগে থেকেই নাজুক পরিস্থিতি বিদ্যমান, সেসব দেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। স্বাস্থ্য ও জলবায়ুর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় গৃহীত বৈশ্বিক প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ মারাত্মকভাবে অপ্রতুল বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আরো স্মরণ করিয়ে দেন, সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ একই সঙ্গে কভিড-১৯ ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্বৈত ঝুঁকি মোকাবেলা করেছে।
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন, শক্তিশালী আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, ত্রুটিহীন দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতির অনুশীলন, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন ও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ যেসব কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে, তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতেমা। তিনি অভিযোজন ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা সুদৃঢ় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সমগ্র সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি’-এর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় গৃহীত সরকারি প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে নারী, যুবসমাজ ও স্থানীয় জনগণকে রাখা হয়েছে।
কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু কর্মপরিকল্পনায় গৃহীত জাতীয় প্রচেষ্টাকে, বিশেষ করে সবচেয়ে নাজুক দেশগুলোয় বাড়তি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর সমর্থন জোগাতে সব উন্নয়ন অংশীদার, বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থা ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
নেদারল্যান্ডসের ভাইস মিনিস্টার বলেন, কভিড পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা অবশ্যই ব্যাপকভিত্তিক হতে হবে এবং যেকোনো ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল মোকাবেলায় শক্তিশালী সামর্থ্য বিনির্মাণে এ পরিকল্পনা হতে হবে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের পরিপূরক। অভিযোজন ও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য অর্জনে গৃহীত বৈশ্বিক প্রয়াসের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি দূর করতে আরো জোরালো প্রচেষ্টা গ্রহণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন আইসিসিসিএডির পরিচালক ড. সালিমুল হক।
সাইড ইভেন্টের বেশ কয়েকজন প্যানেলিস্ট সংকট ব্যবস্থাপনা ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন।