হঠাৎ চাঙ্গা চীনের শেয়ারবাজার

মওকা হারাতে চান না কেউ, রয়েছে ইতিহাস পুনরাবৃত্তির শঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের একটি প্রযুক্তি স্টার্টআপে কাজ করেন মিন হ্যাং। চীনের শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন তিনিও। গত মঙ্গলবার নিজের প্রথম ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। ৩৬ বছর বয়সী হ্যাংয়ের ভাষ্য, কোনোভাবেই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নই আমি। মুহূর্তে নিজেকে অপরাজেয় মনে হচ্ছে। হ্যাংয়ের মতো চীনের লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এখন পুঁজিবাজারে হঠাৎ উল্লম্ফনের মোহে আবিষ্ট।

পাঁচ বছর আগে এমনই বড় ধরনের উত্থান দেখা গিয়েছিল চীনের শেয়ারবাজারে। তবে শেষটা সুখকর ছিল না। এবারো বাজার বেশ চাঙ্গা। টার্নওভার ঊর্ধ্বমুখী। মার্জিন লোনের পরিমাণ বেড়েছে ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে দ্রুতগতিতে। লেনদেনের চাপ এতই বেড়েছে যে অনলাইন ট্রেডিং প্লাটফর্মগুলোকে তা সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেবল গত আটদিনেই চীনা শেয়ারগুলোর বাজার মূলধন যোগ হয়েছে লাখ কোটি ডলারের বেশি, যা বিশ্বের অন্য যেকোনো বাজারের চেয়ে অনেক বেশি।

চীনের পুঁজিবাজারে ধরনের হঠাৎ উত্থান অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। কারণ সেখানকার লোকাল স্টক ট্রেডিংয়ের সিংহভাগই ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের দখলে, যারা আবেগের বশেই বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি মুদ্রানীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এমন বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেন তারা। ফলে তাদের সিদ্ধান্তগুলো পরিবর্তিত হয় ঘন ঘনই।

যদিও বাজার এখনো ২০০৭ অথবা ২০১৫ সালের ইকুইটি বাবলের মতো অত বেশিমাত্রায় তপ্ত হয়ে ওঠেনি, তবুও হঠাৎ ধসের আশঙ্কা রয়েই গেছে। বিশেষ করে যে বিপজ্জনকভাবে শেয়ারদর বাড়ছে, তাতে উলম্ব পতন দেখার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন পতন যেন দেখতে না হয়, সেজন্য বাজারের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশন বুধবার শতাধিক অবৈধ মার্জিন ফিন্যান্সিং প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, তাদের অনেকে নির্ধারিত সীমার ১০ গুণ পর্যন্ত মার্জিন লোন দিয়েছে।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্স চিত্রনাট্যকার লিও লি জানান, তিনি তার সঞ্চিত অর্থের বেশির ভাগই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বেশি মুনাফার আশায় এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ নেননি। তিনি বলেন, আপনি তখনই ঋণ নেবেন, যখন রিটার্নের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত থাকবেন। অবশ্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য লির পরিবার গত বছর সম্পত্তি বিক্রি করেছে বলে জানান তিনি। লি বলেন, সাধারণত এমনটি হয় যখন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বাজারে উত্থানের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে দাঁও মারার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। নিজের বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে যখন সময় আসবে, তখনকার জন্য আমিও প্রস্তুত হয়ে আছি।

২০১৫ সালে এবারের চেয়েও বেশি স্পেকুলেটিভ বাবল দেখা গিয়েছিল চীনের শেয়ারবাজারে। সেবারও জোয়ারে মার্জিন লোনের অবাধ প্রবাহ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি। যেভাবে হঠাৎ উত্থান, ঠিক সেভাবেই হঠাৎ করে লাখ কোটি ডলার মূলধন হারায় চীনের শেয়ারবাজার।

সেবারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন বলে দাবি করছেন টিম ঝাও। ২০১৫ সালের ধসে বিপুল পরিমাণ পুঁজি হারিয়েছেন তিনি। তার পরও ঊর্ধ্বগামিতা দেখে বাজারে ফিরেছেন তিনি। অবশ্য এবার তিনি কিছুটা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ঝাও বলেন, এবার সবকিছুতেই পরিস্থিতি ভিন্ন। এখনকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল।

অবশ্য এবারের উত্থান অন্তত পাঁচ বছর স্থায়ী হবে বলে আশাবাদী ঝাও। আর অনেকে তো মনে করছেন, ২০১৫ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না এবার। তাদের যুক্তি, ধীরগতির কিন্তু স্থিতিশীল বুল মার্কেট ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এখন নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে হঠাৎ ধস নামার আগেই বেরিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন