অস্ট্রেলিয়ায় ফের লকডাউন, বাকিদের জন্য কী বার্তা?

জেমস গ্রিফিথ

এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এক এক করে দেশ অঞ্চলগুলো করোনাভাইরাসে যাদের শীর্ষে দেখাচ্ছিল তারা এখন ভাইরাসের দ্বিতীয় তৃতীয় ঝড় দেখতে শুরু করেছে। আংশিকভাবে সীমান্ত বন্ধ এবং কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু থাকলেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মেলবোর্ন ফের লকডাউনে ফিরে গেছে। এর মাঝে গত ১০০ বছরে প্রথমবারের মতো দেশটি ভিক্টোরিয়া নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যকার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে সপ্তাহব্যাপী স্থানীয় সংক্রমণ না থাকার পর, হংকংয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন তৃতীয় ঝড় সামলানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অবশ্য দুটি অঞ্চলে সংক্রমণের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন অংশের প্রতিদিনকার সংক্রমণের চেয়ে কমই। সে সঙ্গে প্রশ্নও উত্থাপিত হয়েছে সবচেয়ে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা কবে নাগাদ ফিরে আসবে। যেখানে সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একইভাবে অস্ট্রেলিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ইসরায়েলে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, অথচ একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল দেশগুলো ভাইরাসকে পরাজিত করেছে।

মাসে দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর মেলবোর্ন বিশেষভাবে কঠোর লকডাউন আরোপ করে বিধিনিষেধ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মেলবোর্নে বসবাসকারীদের মুদি দোকানের কেনাকাটা, শিশু বৃদ্ধদের দেখাশোনা করা, ব্যায়াম অথবা কাজ ছাড়া বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ক্যাফে রেস্টুরেন্টগুলো কয়েকদিন আগে চালু হওয়ার পর আবারো নিজেদের সার্ভিস স্থগিত করেছে এবং কেবল ডেলিভারি বাসায় নিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা চালু রেখেছে তারা। পাশাপাশি বিউটি পার্লার এবং বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। স্টেটের প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুস বলেন, আমরা ভাইরাসটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য আগ্নেয়গিরির মতো হওয়ার কথা বলছি। এটা স্পষ্ট যে আমরা এখন দ্বিতীয় ঝড় দেখছি এবং এখন এই ভাইরাসটিকে আমাদের কমিউনিটিগুলোকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না।

নিউ সাউথ ওয়েলসের সীমানা স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর পর প্রথমবারের মতো বন্ধ করা হয়েছে। সর্বশেষ ১০০ বছর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল। অন্য স্টেটগুলোও ভিক্টোরিয়ান্সদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এটি তারা করেছে মূলত ভাইরাসকে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য।

স্টেটজুড়ে ভ্রমণের জন্য ভিক্টোরিয়ায় বসবাসকারীদের অনলাইনে আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে। যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার এবিসি বলছে, ৪৪ হাজার মানুষ আবেদন করার পর ৪৫ মিনিটের মাঝেই ওয়েবসাইট ক্রাশ করে।

চীনকে অনুসরণ করে মেলবার্ন একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছে, যারা কিনা মাসখানেক আগেও ঘরোয়া মহামারীকে বৃহৎ আকারে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল। সে সঙ্গে দ্রুত সংক্রমণের নতুন স্পটগুলো চিহ্নিত করে কাঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ শিথিলাবস্থা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার পর হংকং সাম্প্রতিক সময়ে বিধিনিষেধগুলো ফিরিয়ে আনছে। সে সঙ্গে সরকার জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছে মাস্ক পরতে, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো ঠিকমতো মেনে চলতে।

এদিকে ভিক্টোরিয়ান প্রিমিয়ার অ্যান্ড্রুস বলেন, আমি মনে করি, আমরা প্রত্যেকে এমন কাউকে চিনি যে কিনা নিয়মকানুন মেনে চলে না। আমরা সবাই জানি যে আমাদের খুব কঠিন পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

কিন্তু সেসব দেশ যারা মৌলিক পদক্ষেপগুলো নিয়েছে ভাইরাস মোকাবেলার জন্য তা কি অনেক মানুষের কাছে অভিশাপ বলে মনে হচ্ছে না? এখন সেসব দেশ যারা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যারা কিনা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে। অথচ দেশটি এখনো প্রথম ঝড়ই ঠিকমতো মোকাবেলা করতে পারেনি।

অস্ট্রেলিয়া, হংকং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ভাইরাস মোকাবেলায় কয়েক মাস চলে গেছে। এমনকি সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও সংক্রমণ এড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মানুষ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে চলছে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এড়িয়ে চলছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা মাস্ক ব্যবহার করছেএই পরিস্থিতিগুলো সেসব অঞ্চলকে শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও কভিড-পূর্ব সময়ের জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করবে। যদিও মাঝে মাঝে ভাইরাসের বিস্তৃতি লকডাউনও সে পথে দেখা যাবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এমনটা কল্পনা করা কঠিন। যেখানে কিনা মাস্ক নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে এবং রাজ্যের অধিকারকরা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করছে।

সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন