করোনাভাইরাস মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে!

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস কেবল যে আমাদের ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তা নয়। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কভিড-১৯ মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি এবং স্নায়বিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। গত বুধবার ব্রেন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিছু রোগী মস্তিষ্কের ফোলা ভাব অনুভব করে, যার ফলে তাদের মধ্যে প্রলাপ বকা বা বিকারের মতো সমস্যা দেখা দেয়।  অন্য রোগীদের গিলিন-ব্যারি সিনড্রোমের মতো স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা তৈরি হয়, যার ফলে প্যারালাইসিস হতে পারে, আবার কয়েকজনের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী স্ট্রোকও হতে পারে।

নতুন গবেষণাটির সহযোগী মাইকেল জান্দি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, কভিড-১৯ যেভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে, অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে এর আগে আমরা কখনো দেখিনি। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত যেসব রোগীর অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়, তাদের সমস্যা কেবল স্নায়বিক লক্ষণগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আপনার মারাত্মক স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, আপনি বেশ অসুস্থ হতে পারেন, অন্যদিকে দেখা যাবে আপনি ফুসফুসের সামান্য সমস্যায় ভুগছেন।

গবেষণাটিতে ১৬ থেকে ৮৫ বছর বয়সী ৪৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। তারা সবাই ব্রিটেনের লন্ডনের ন্যাশনাল হসপিটাল ফর নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরোসার্জারিতে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ জন রোগীর প্রলাপ বকাসহ মস্তিষ্কের গুরুতর ফোলা ভাব ছিল। মানসিক রোগবিহীন ৫৫ বছর বয়সী একজন নারী হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার তিনদিন পর অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বামী।

আরো এক ডজন রোগীর ক্ষেত্রেও তাদের স্নায়ুতন্ত্রের ফোলা ভাব ছিল এবং তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ১২ জনের মধ্যে জনের তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়া এনসেফ্যালোমেলাইটিস (এডিইএম) ধরা পড়েছিল। এটা বিরল ধরনের প্রদাহ, যা সাধারণত মাম্পস বা হামের মতো সংক্রমণের পর শিশুদের মস্তিষ্ক মেরুদণ্ডের কর্ডগুলোতে আক্রমণ করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, মহামারীর শুরুতে হাসপাতালে যেখানে মাসে একজন এডিইএম রোগী আসত, সেখানে এপ্রিল মে মাসে সেটা বেড়ে প্রতি সপ্তাহে দুই বা তিনজনে দাঁড়িয়েছে।

গবেষণায় যুক্ত আরো সাতজন রোগীর গিলেন-ব্যারি লক্ষণ দেখা দিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে কভিড-১৯-এর লক্ষণের পর তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্নায়বিক লক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল।

সামগ্রিকভাবে গবেষকরা দেখেছেন প্রাণঘাতী স্নায়বিক সমস্যাগুলো রোগীদের গুরুতর শ্বাস-প্রশ্বাসের লক্ষণগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তার মানে হলো রোগীর ফুসফুস ঠিকঠাক থাকলেও মস্তিষ্কে সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, মহামারীর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো নির্ধারণ করতে কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের ফলোআপ করতে হবে। জান্ডির দল এবং অন্য গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য মস্তিষ্ক-ক্ষতির সমস্যা প্রকাশিত নাও হতে পারে।

গবেষণায় জড়িত নন এমন একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যাড্রিয়ান ওউন বলেছেন, আমার উদ্বেগ হলো, আমাদের এখন কভিড-১৯ আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষ আছে। যদি এক বছরের মধ্যে আমাদের কোটি মানুষ সেরে ওঠে এবং তাদের মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়, তাহলে এটা তাদের কাজ করার ক্ষমতা এবং প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে। অ্যাড্রিয়ান ওউন রয়টার্সকে বলেছেন, কয়েকজন বিজ্ঞানী আশঙ্কা করছেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্গে যুক্ত মস্কিষ্কের ক্ষতি পরবর্তী সময়ে আরেকটি মহামারী তৈরি করতে পারে।

সায়েন্স অ্যালার্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন