পরিবর্তন আসছে চীনের ১১ হাজার কোটি ডলারের বিলাসপণ্যের বাজারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের গুয়াংডংয়ের একটি ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান জেফ মেংকে ঘড়িপ্রেমী বলা যায়। ২৫ বছর বয়সী তরুণ পকেটে লাখ ৬০ হাজার ইউয়ান (২২ হাজার ৮০০ ডলার) নিয়ে ঘুরছেন পান্ডা কিনবেন বলে। না, জলজ্যান্ত, নাদুস-নুদুস কোনো জায়ান্ট পান্ডা ঘরে আনবেন না তিনি। আসলে মেং একটি রোলেক্স ডেটোনা ঘড়ি কিনতে চান, কালো সাদা ডায়ালের কারণে যেটি চীনে পান্ডা হিসেবে সমধিক পরিচিত। কিন্তু হন্যে হয়ে ঘুরেও কোথাও ঘড়িটি পাননি মেং।

আসলে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ ভ্রমণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কারণে গ্রে বা প্যারালাল ইম্পোর্টারদের নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রে ইম্পোর্টার হলেন সেইসব আমদানিকারক, যারা প্রস্তুতকারকের অনুমতি না নিয়েই কোনো পণ্য আমদানি করেন। ধরনের অননুমোদিত আমদানিকারকদের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মেংয়ের মতো ধনীর দুলালরাও বিপাকে পড়েছেন। তারা তাদের বিলাসী জীবনের অনুষঙ্গগুলো কিনতে পারছেন না। মেংয়ের মতো চীনের উচ্চবিত্ত ক্রেতারা বিলাসপণ্যের পেছনে সম্মিলিতভাবে বছরে প্রায় ১১ হাজার ১০০ কোটি ডলার খরচ করেন।

অচলাবস্থার কারণে বালেনসিয়াগা মঁব্লাঁর মতো বিশ্বের বিলাসী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এখন চীনের ক্রেতাদের কাছে কীভাবে পণ্য পৌঁছে দেয়া যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করছে। বিশেষ করে যখন ভেজাল পণ্যের বিক্রেতা -কমার্স প্লাটফর্মগুলোর কাছে বাজার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার উদ্বেগ আগে থেকেই আছে।

এদিকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের সেকেন্ডহ্যান্ড লাক্সারি মার্কেটের উত্থান হয়েছে। কারণ ক্রেতারা নির্দিষ্ট স্টাইল মডেলের পণ্য কেনার জন্য পাগল থাকেন। কিন্তু যখন স্থানীয় বাজারে সেগুলো কোনো মতেই নতুন পাওয়া যায় না, তখন পুরনোই সই।

বেইন অ্যান্ড কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, করোনা-পূর্ব সময়ে চীনের বিলাসপণ্যের দুই-তৃতীয়াংশই আসত বিদেশ থেকে। হয় অবকাশ সময়ে বিদেশে গিয়ে চীনারা সেগুলো কিনে আনে অথবা দাইগৌদের মতো রিসেলাররা চীনে বসবাসকারী ব্যক্তি, সেখানে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী অথবা ভ্রমণরত বিদেশী পর্যটকদের ব্যবহার করে সেগুলো চীনা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়। দাইগৌর অর্থ কারো হয়ে কেনা। অর্থাৎ রিসেলাররা চীনা ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে বিলাসপণ্যগুলো উৎপাদকদের কাছ থেকে কেনে এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে তা চীনে পাঠায়।

কিন্তু এখন ভ্রমণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর দাইগৌ সেলাররাও হয় দেশে ফিরেছে অথবা ইউরোপে আটকা পড়েছে। মহামারী আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে চীনে আপনি চাইলেই আপনার পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারবেন না’—খানিকটা হতাশ হয়েই বলেন মেং।

চীনের অনেক ক্রেতাই রয়েছেন, যারা সাধারণত বিদেশ ভ্রমণ করেন না। তাদের কথা মাথায় রেখে বিলাসপণ্যের ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল চীনে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে উদ্বুদ্ধ করছে তাদের।

এদিকে চীন সরকার চাইছে বিলাসপণ্যের পেছনে চীনারা যে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করে, তা যেন নিজ দেশেই থেকে যায়। বিশেষ করে করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটপূর্ণ আর্থিক পরিস্থিতিতে। কারণে দেশেই ধরনের পণ্য তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে তারা। অবস্থা এমন দাঁড়াতে পারে যে করোনা সংকট কেটে গেলেও চীনের বিলাসী ক্রেতারা আর আগের ধারায় ফিরে যাবেন না।

বেইন অ্যান্ড কোম্পানির একটি প্রক্ষেপণ বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীন হবে বিশ্বে বিলাসপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। আর সময় নাগাদ দেশটিতে যে পরিমাণ বিলাসপণ্য বিক্রি হবে, তার অর্ধেকের বেশিই দেশে তৈরি হবে। ২০১৯ সালে যা ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন