সেবা পেতে লাগছে করোনা নেগেটিভ সনদ

মৃত্যুঝুঁকিতে জটিল রোগীরা

তবিবুর রহমান

স্ট্রোক করার পর রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা ইসরাত জাহানকে (৪৮) সম্প্রতি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর কভিড-১৯ পরীক্ষা করা ছাড়া চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। মুমূর্ষু রোগীকে ওই সময় শুধু একটি স্যালাইন দিয়ে হাসপাতালের বেডে ফেলে রাখা হয়।

বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটির পর আত্মীয়-স্বজন রোগীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাতে সক্ষম হন। পরদিন রাতে মারাত্মক অবনতির দিকে চলে যায় রোগীর অবস্থা। সময় স্বজনরা চিত্কার করে ডাক্তার ডাকলেও তাতে সাড়া দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু হয় ইসরাত জাহানের। মৃত্যুর তিনদিন পর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসে রোগীর। তাতে দেখা যায়, রোগী করোনায় সংক্রমিত ছিলেন না।

কিডনির সমস্যার কারণে এক বছর ধরে বেটারলাইফ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন বনশ্রীর বাসিন্দা সেলিমা আক্তার (৬৭) দুই সপ্তাহ আগে ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা পরীক্ষা ছাড়া ডায়ালাইসিস করা যাবে না। অন্যদিকে তিনদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও করোনা পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হন তার স্বজনরা। এক পর্যায়ে বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যুবরণ করেন সেলিমা বেগম।

করোনা সনদের দীর্ঘসূত্রতার কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা। চিকিৎসা পেতে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে একদিকে তাদের পোহাতে হচ্ছে নজিরবিহীন ভোগান্তি, অন্যদিকে পরীক্ষার সনদ হাতে আসতেও সময় নিচ্ছে অনেক। এতে  চিকিৎসাবঞ্চিত অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে অনেক জটিল রোগে আক্রান্তদের।

বিষয়টি নজরে আসায় এরই মধ্যে ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ৩৬-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। যদিও আদেশের কোনো বাস্তবায়ন এখনো চোখে পড়েনি।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণ জটিল রোগীদের আস্থা ফেরাতে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যেকোনো সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এলে কাউকে বিনা চিকিৎসায় ফেরানো হবে না, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ হচ্ছে। করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতালে গিয়ে জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক রোগী অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ জরুরি বিভাগের সামনেই ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। অবস্থা থেকে সাধারণ রোগীদের মুক্তি দিতে সরকারের উচিত হবে অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা অথবা স্বল্প সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। তা না হলে বিনা চিকিৎসাতেই অনেকের মৃত্যু হবে।  

রাজধানীর সরকারি কয়েকটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে রোগীর চাপ অনেক কম। এর পরও যারা সেবা নিতে আসছেন, তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও সেবা পাচ্ছেন না। অনেক অনুরোধের পর নার্স এসে রোগীর অবস্থা দেখলেও চিকিৎসকরা সহজে আসছেন না।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে সহকারী ম্যানেজার আজাদ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার শুরুতে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল। অনেক রোগী তথ্য গোপন করে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়ায় আমাদের অনেক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা করে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন