মোহাম্মদপুরে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য আবাসন

৯০০ ফ্ল্যাটের মধ্যে দেড়শটিই অবিক্রীত

জেসমিন মলি

ঢাকা শহরের সীমিত আয়ের মানুষের আবাসন সংকট নিরসনে মোহাম্মদপুরেরএফব্লকে ৯০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ঢাকা শহরেরপ্রাইম লোকেশনেঅবস্থিত সরকারি প্রকল্পে এখনো ১৫০ ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প যখন নেয়া হয়, সে সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। মূলত দাম বাড়ার কারণেই গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারেনি।

সীমিত আয়ের মানুষের জন্য ৯০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ২০০৬ সালে প্রকল্পটি নেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে একাধিকবার। এখন নতুন করে মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ১৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে এখন।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, মূল প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০০৬ সালের জুলাইয়ে, সে সময় তার মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০০৯ সাল পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরে সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩০৫ কোটি টাকা, সেটিও সংশোধন করা হয়। এখন প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। মূল প্রকল্পটি সংশোধিত হয়ে ব্যয় বেড়েছে ২০৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, আর সময় বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। পরে ব্যয় বাড়ানো বাদেই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সাল পর্যন্ত। একই সঙ্গে প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক পদে পরিবর্তন এসেছে ১১ বার। এখন যে প্রকল্প পরিচালক রয়েছেন, তিনি একই সঙ্গে আরো চারটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৫টি ভবনের মধ্যে চারটি ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১১টি ভবনের মধ্যে কাজের অগ্রগতি গড় ৭৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক পরিবীক্ষণে প্রকল্পটির বেশকিছু ত্রুটি উঠে এসেছে। সেসবের মধ্যে রয়েছে একাধিকবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন, একই প্রকল্প পরিচালকের একাধিক প্রকল্পে সম্পৃক্ততা। এছাড়া প্রকল্পটির সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন না নিয়ে প্রকল্প কাজ চালানো, ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা না সাজানো। এসবের ফলে প্রকল্পের কাজে সবসময় ধীরগতি ছিল।

এছাড়া আইএমইডি প্রকল্প কাজে বেশকিছু ত্রুটিও খুঁজে পেয়েছে। ত্রুটিগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ভবনের পানি নিষ্কাশনের কাজ ভালোভাবে করা হয়নি, কিছু ঢালাইয়ের কাজ যথাযথভাবে করা হয়নি। এছাড়া প্রকল্পটির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বের মূল কারণের মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ দখল কার্যক্রম শেষ হতে দুই বছর বেশি সময় লেগেছে। এছাড়া প্রকল্প সংশোধন হওয়ায় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদারও। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণ দাবি করায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে সময় লেগেছে। এছাড়া পাইলিংয়ের সময় স্থানীয়দের বাধার কারণে দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া শুরু থেকে প্রকল্পটির নকশায় একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়। ফলে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-২। এখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে, তাতে নতুন যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সে সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। যেসব ফ্ল্যাট অবরাদ্দকৃত রয়েছে, সেসব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ দিতে আগ্রহপত্র ঈদের পর পরই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের। দাম নির্ধারণের বিষয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ডসভা সিদ্ধান্ত নেবে। সেই অনুযায়ীই পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন