বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নে দুর্বৃত্তদের গুলিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমা (সংস্কার) দলের ছয় নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ আরো তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাঘমারা বাজারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ, বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ডেভিড মারমা, বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা, সদস্য জয় ত্রিপুরা ও জিতেন ত্রিপুরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এমএন লারমা (সংস্কার) দলের নেতারা। তবে ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছে, তা উদ্ঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান পুলিশ সুপার।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকাল ৭টার দিকে বাঘমারা বাজারপাড়ায় এমএন লারমা (সংস্কার) দলের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে ১৪-১৫ জন দলীয় সদস্য জড়ো হন। এ সময় ওই বাড়িতে প্রাতঃখাবারের আয়োজন হচ্ছিল। সে সময় অতর্কিত তাদের ওপর গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে এমএন লারমা (সংস্কার) দলের ছয়জন মারা যান। এ ঘটনায় পাশের বাড়ির এক নারী ও দলের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। এরপর স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ইউনিয়নটির নারী সদস্য শৈএনু মারমার মেয়ে হ্লাওয়াংসিং মারমা, এমএন লারমা (সংস্কার) দলের বিদ্যুৎ চাকমা ও নিহার চাকমা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিদ্যুৎ চাকমা জানান, তার বাড়ি খাগড়াছড়ির রামগড়ের রাব্যপাড়ায়। দেড় মাস আগে তিনি খাগড়াছড়ি থেকে বাঘমারা বাজার পাড়ায় এসে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে ছিলেন। পরে বাজারে দলের অফিস-ঘর নেয়া হলে সেখানে অবস্থান করেন খাগড়াছড়ির তিনিসহ আরো অনেকে। গতকাল সকালে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে ১৪-১৫ জনের খাবারের আয়োজন হচ্ছিল। গুলি করার সময় ওই বাড়িতে দলের ৯-১০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পিসিজেএসএসের সন্ত্রাসীরা গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একইভাবে দলটির বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মালেক বম অভিযোগ করেন, জনসংহতি সমিতির মূল দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর এ হামলা চালিয়েছে। দলের প্রতিরক্ষা সেক্টরের সদস্যরা অনতিদূরের রাজেন্দ্রপাড়ায় অবস্থান করার সুযোগে এ সশস্ত্র হামলা করা হয়েছে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, গতকাল সকালে ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের দুজনকে চট্টগ্রামে ও একজনকে চকরিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা, কোন উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ ঘটনায় মামলা ও অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
