গণশৌচাগার নির্মাণের আড়ালে রেলওয়ের মাঠ দখলের চেষ্টা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে রেলওয়ের মাঠ দখল করে চলছে গণশৌচাগার নির্মাণ। অভিযোগ রয়েছে, গণশৌচাগার নির্মাণের আড়ালে সরকারি মাঠ দখলের পাঁয়তারা করছে প্রভাবশালী একটি মহল।

এদিকে মাঠটি দখল হয়ে গেলে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, খেলাধুলা, সাপ্তাহিক হাটবাজারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনে বিঘ্ন ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীরা।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী মহল মাঠটি দখল করে বাণিজ্যিকভাবে ঘর মার্কেট নির্মাণেরও পরিকল্পনা করছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই গণশৌচাগার নির্মাণ শুরু করা হয়। এজন্য পরবর্তী সময়ে রেলওয়ের বাধায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় আক্কেলপুরের তিলকপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের মাঠে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে গণশৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু করে আক্কেলপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। শতবছরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় দুই একর আয়তনের মাঠে জাতীয় দিবসসহ নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অন্য স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণের প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল কৌশলে ঐতিহ্যবাহী মাঠে গণশৌচাগার নির্মাণ করে মাঠটি দখলের পাঁয়তারা করছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল সোবহান, তোজাম্মেল হোসেন, হারুন-অর-রশীদ, জাকির হোসেন, মাদ্রাসার পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার সামনে আমাদের মার্কেট আছে। মার্কেটের সামনে রেলওয়ের মাঠে জাতীয় বিজয় দিবস, সাপ্তাহিক হাটবাজার, শিক্ষার্থী স্থানীয়দের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মাঠে গণশৌচাগার নির্মাণের কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। কারণ গণশৌচাগার হিসেবে মাঠের পাশেই মাদ্রাসার টয়লেট, গোসল খানা রয়েছে। তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন স্থানীয়রা। এতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।

তারা বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ অবশ্যই হবে। কিন্তু যেখানে প্রয়োজন সেখানে হওয়া দরকার। শৌচাগারটি হাটের মধ্যে প্রয়োজন। হাটের মধ্যে না করে রেলওয়ের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, গণশৌচাগার নির্মাণের আড়ালে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মাঠ দখল করে বাণিজ্যিকভাবে দোকান মার্কেট নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের চেষ্টা করছে প্রভাবশালী মহলটি। এর আগে একইভাবে স্টেশনের পূর্বপাশের জমি দখল করে বড় মার্কেট করা হয়েছে।

তিলকপুর রেলওয়ে স্টেশনের পোর্টাল শারমিন আক্তার বলেন, শুধু প্লাটফর্ম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। রেলওয়ের স্টেট বিভাগ ভূমির বিষয়গুলো দেখে। তারা এসে ওই শৌচাগারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।

তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাট কমিটির সভাপতি সেলিম মাহবুব সজলের কাছে মাঠ দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে অনেক কষ্টে আছি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আক্কেলপুর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মনজুরুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, আগের ইউএনও উপজেলা কমিটি মৌখিকভাবে ওই মাঠে কাজ করতে বলেছিলেন, এজন্য কাজ শুরু করা হয়েছিল। রেলওয়ের লোকজন এসে নির্মাণকাজ স্থগিত করতে বলায় কাজ বন্ধ আছে।

আক্কেলপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, উপজেলা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ওই এলাকায় একটি গণশৌচাগার জরুরি প্রয়োজন। কারণে গণশৌচাগারটির কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু যেহেতু রেলওয়ের সম্পত্তি, তাদের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নেয়া ছিল না, এজন্য কাজ বন্ধ আছে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরও জনস্বার্থে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন