জনস্বাস্থ্যে সফল হলেও এশিয়ায় তলানিতে থাই অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলদের উদাহরণ হিসেবে মানা হচ্ছিল থাইল্যান্ডকে। টানা ৪০ দিনের বেশি সেখানে স্থানীয়ভাবে কোনো সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। কিন্তু প্রসঙ্গটা যখন অর্থনীতিকেন্দ্রিক হয়, তখনই মুদ্রার উল্টা পিঠ দেখতে হয়। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসই সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। খবর ব্লুমবার্গ।

চলতি বছর থাইল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদন দশমিক শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বলে ধারণা করছে ব্যাংক অব থাইল্যান্ড। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলোর সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী সংকোচনের হার সর্বোচ্চ। থাইল্যান্ডের ইতিহাসে এটি হবে জিডিপিতে সবচেয়ে বড় পতন। এমনকি দুই দশক আগে পুরো এশিয়া যখন অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছিল, তখনো এত বড় পতন দেখতে হয়নি থাইল্যান্ডকে।

তাহলে এবার কী এমন হলো, যার কারণে দেশটির অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা? এর অন্যতম প্রধান কারণ নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক ভ্রমণ খাতের উলম্ব পতন। থাইল্যান্ডে কর্মরত বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কিয়াটিপং আরিয়াপ্রুচিয়া বলেছেন, থাই অর্থনীতি পর্যটনের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। দেশটির জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ আসে খাত থেকে। এছাড়া রফতানিমুখী খাতগুলোরও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। আর নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দুটি খাতই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণে থাইল্যান্ডের অর্থনীতির অবস্থাও এবার সঙ্গিন হয়েছে।

ব্লুমবার্গের একটি জরিপে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি বছর থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে শতাংশ সংকোচন দেখা যেতে পারে; যা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া আগামী বছর অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরলেও তার গতি অনেক কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা।

থাইল্যান্ডের এই অর্থনৈতিক দুর্দশার পেছনে জরুরি অবস্থা, লকডাউন, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার মতো কিছু অভিন্ন প্রভাবকের ভূমিকা রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও টেনে নামিয়েছে। করোনা মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্যগত যে সাফল্য থাইল্যান্ড দেখিয়েছে, তা অর্জন করতে গিয়েই অর্থনৈতিকভাবে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে তাদের। ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি অবস্থা জারি করেছে তারা। সেই সঙ্গে বলবৎ করেছে সান্ধ্য আইন। এছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়। ফলে ভোক্তাব্যয় বেসরকারি বিনিয়োগ খাতে নেমে আসে স্থবিরতা, যা আগে থেকেই কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করায় প্রণোদনা অব্যাহত রাখায় ভোক্তাব্যয় আবার বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে না আসায় বিনিয়োগে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে আরো সময় লাগবে।

অবস্থা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিরাজ করছে। কিন্তু থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশি সঙ্গিন হওয়ার কারণ হলো, পর্যটন খাতের ওপর এর নির্ভরশীলতা। এপ্রিল মেটানা দুই মাস দেশটিতে কোনো পর্যটক প্রবেশ করেনি অথবা তাদের কাছ থেকে থাইল্যান্ড কোনো রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি। চলতি বছর দেশটিতে বিদেশী পর্যটকদের আগমন ৮০ লাখে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের মোট সংখ্যার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ।

প্রথম দিকে মনে হয়েছিল চলতি বছর থাইল্যান্ডের রফতানি খাতের অবস্থা ততটা খারাপ হবে না। কারণ বছরের প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যে মাত্র দুই মাসে দেশটির রফতানি কমেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বৈশ্বিক চাহিদায় পতন সরবরাহ ব্যবস্থার স্থবিরতায় কেবল স্বর্ণ বাদে বাকি সব খাতেই রফতানিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। মহামারীর মধ্যেও স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণেই প্রথম পাঁচ মাসে রফতানির পরিসংখ্যান কিছুটা ভদ্রস্থ দেখাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন