রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া যায় কিনা যাচাইয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া কিংবা এই অর্থ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি নির্দেশনা দেন। এই অর্থ ব্যবহার করলে অর্থনৈতিক কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিশ্লেষণ করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গতকালের একনেক বৈঠকে হাজার ৭৪৪ কোটি ব্যয়সংবলিত নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী একটি ঐতিহাসিক পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার। তাই বিদেশী ঋণ না নিয়ে এই টাকা ব্যবহার করা যায় কিনা। যেহেতু তিন মাসের আমদানি ব্যয় জমা থাকলেই সেটি স্বস্তিদায়ক, সেহেতু আমাদের যে অর্থ জমা আছে তা দিয়ে প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে ব্যয় করা যায় কিনা, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এও বলেন, প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভের অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেননি। তিনি একটি আইডিয়া দিয়েছেন। এই অর্থ ব্যয় করলে অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে এবং অর্থ ব্যয় করা যাবে কিনা, সে বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বিশ্লেষণ করবে।

ধরনের উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে অর্থ নেয়া সম্ভব, উচিত প্রয়োজন রয়েছে। এই অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যায়। তবে ঋণ নিতে হবে ডলারে এবং পরিশোধও করতে হবে ডলারেই। তাছাড়া বিদেশ থেকে ঋণ নিলে সুদ কম থাকলেও নানা শর্ত মানতে হয়। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়াসহ নানা জটিলতা থাকে। আমরা আমাদের নিজেদের টাকা নিজেরাই ব্যবহার করব, বাম হাতের টাকা ডান হাত ঋণ নেবে এতে কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বিষয়ে নিয়মকানুন, নীতিমালা বিধি ঠিক করবে অর্থ বিভাগ।

একনেক বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ ১০ বছরে শেষ হয়নি কেনতা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি আগামীর নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। যদিও সময়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি আরব ওপেক ফান্ডের ঋণ প্রক্রিয়াকরণ এবং পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যদিও মূল অনুমোদিত ছিল ৬৩০ কোটি টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সেতু নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভালোভাবে পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য এলজিইডি, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কভিড-১৯-এর কারণে আমরা উন্নয়ন থেকে বিচ্যুত হব না। আমরা জেনেবুঝেই প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছি। আশা করছি, কভিড-১৯ দীর্ঘায়িত হবে না। আমরা দ্রুত মূলধারায় ফিরে আসব।

নয় প্রকল্প অনুমোদন: গতকাল একনেকের বৈঠকে নয়টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ৫৬৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির পূর্ব অনুমোদিত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ৯৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির পূর্ব অনুমোদিত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল হাজার ৫১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, পত্নীতলা মহাদেবপুর উপজেলাধীন তিনটি প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং আত্রাই নদের ড্রেজিংসহ তীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহরসংলগ্ন ঢেপা গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং/খনন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

রূপগঞ্জ জলসিড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, জামালপুর শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আগে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৮৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৭ কোটি লাখ টাকা। প্রকল্পটির আগে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন