অর্থমন্ত্রীর কাছে চার সংগঠনের চিঠি

পোশাক রফতানিতে নগদ সহায়তায় জটিলতা সমাধানের অনুরোধ

বদরুল আলম

দেশের রফতানিমুখী পোশাক খাতের বিকাশে সরকার ঘোষিত নগদ সহায়তা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ হয়রানিসহ নানামুখী বিড়ম্বনার অভিযোগ তুলেছে রফতানিসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের চার সংগঠন। এজন্য দায়ী করা হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে বিষয়ে জারীকৃত সার্কুলারের শব্দগত জটিলতা ভাষাগত অস্পষ্টতাকে। বিষয়টি সমাধানের জন্য এসব অস্পষ্টতা দূর করে নতুন সার্কুলার জারির অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানিমুখী পোশাক খাতের বিকাশে সরকারের নগদ সহায়তা দেয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। ২৫ শতাংশ হারে সুবিধা দেয়া শুরু হলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ দশমিক শতাংশ হার পর্যন্ত দেয়ার দিকনির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া সরকার ঘোষিত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ, হয়রানিসহ নানামুখী বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় বলেও অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন, নিয়ে জারীকৃত সার্কুলারগুলো সমস্যার সমাধান না করে গোটা প্রক্রিয়াটিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি সেলিম ওসমান, এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি . রুবানা হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বরাবর পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, বহুদিন ধরেই নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পরিপ্রেক্ষিতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বাজেটে দেশীয় সুতা ব্যবহারের বিপরীতে বিকল্প নগদ সহায়তার হার শতাংশ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তা সর্বোচ্চ দশমিক শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ১৯৯৭ সালে ২৫ শতাংশ দিয়ে এটি শুরু হয়েছিল। এর ফলে এরই মধ্যে বাংলাদেশের রফতানিমুখী পোশাক খাতের বিশেষ করে নিটওয়্যার সেক্টরের একটি শক্তিশালী পশ্চাত্সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে।

চিঠিতে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে জারীকৃত নগদ সহায়তা সংক্রান্ত সার্কুলারের অস্পষ্টতা সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট ফার্ম, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট, স্থানীয় রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মতো করে এসব সার্কুলারের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা দেয়ায় নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে রফতানিকারকরা নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে পুরো কারখানার পুঁজি উত্পাদন প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে নগদ সহায়তা পরিশোধের বিষয়ে সার্কুলারগত জটিলতা নিরসন নিয়ে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সভায় ইএবি, বিটিএমএ, বিকেএমইএ বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হয়রানির কথা তুলে ধরা হয় এবং সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি রফতানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

সভায় সার্কুলারগুলোর ভাষাগত জটিলতা দূর করে সহজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে সরাসরি প্রত্যাবাসিত রফতানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই সভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী নগদ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সার্কুলারের অস্পষ্টতা শব্দগত জটিলতা সহজ করার এবং ১০ দিনের মধ্যে অডিট সার্টিফিকেট দেয়ার নির্দেশ দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ওই নির্দেশনার পর কোনো ধরনেরই আলোচনা ছাড়াই ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর -সংক্রান্ত একটি এফই সার্কুলার জারি করা হয়, যাতে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নতুন করে আরো জটিলতা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সংগঠনগুলো।

চিঠিতে চার সংগঠনের সভাপতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অন্যান্য সব খাতের নগদ সহায়তা সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর দেয়া হলেও একমাত্র বস্ত্র খাতেই এটি দেয়ার ক্ষেত্রে বস্ত্রমূল্য অথবা প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ৮০ শতাংশকে আমলে নেয়া হয়ে থাকে, যা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল। এছাড়া নগদ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অডিট সিস্টেম আরো জটিল একটি বিষয়। কারণ অডিটের কারণেই শিল্প মালিকদের নানাভাবে হয়রানি হতে হয় বিলম্বিত হয় এবং অনেক সময় নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

চার সংগঠন বলছে, আবেদনের মাধ্যমে নগদ সহায়তা পেতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে দেশী সুতা বা কাপড় দিয়ে উত্পাদিত পণ্য রফতানির বিপরীতে মূল্য প্রত্যাবাসিত হওয়ার পর প্রচলিত পদ্ধতিতে এবং নির্ধারিত হারে আবেদন করা হয়েছে কিনা, তা বিবেচ্য ধরা হয়। এক্ষেত্রে অডিটের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনীয় সব দালিলিক প্রমাণ রক্ষিত থাকে। অথচ অডিটের কারণে নগদ সহায়তার সার্টিফিকেট পেতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় মাস থেকে এক বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এরপর সার্টিফিকেটসহ দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকে যাওয়ার পর আরো ছয় থেকে ১২ মাস সময় লেগে যাচ্ছে। এর ওপর আবার নগদ সহায়তার ওপর জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে উেস কর কর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আগে ছিল শতাংশ। এছাড়াও নগদ সহায়তার বিপরীতে ব্যাংক থেকে দেয়া অগ্রিম তহবিলের ওপর ১২ থেকে ১৩৬ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন