কোরবানি সামনে রেখেও মসলার বাজারে মন্দা

সুজিত সাহা চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রতি বছরই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে ওঠে গরম মসলার বাজার। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোরবানি সামনে রেখে ভরা মৌসুমেও চাহিদা মন্দায় কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে গরম মসলার দাম।

সাধারণত রোজার ঈদের পর থেকেই গরম মসলার পাইকারি বিকিকিনি শুরু হয়ে যায়। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা গরম মসলার মজুদ শুরু করেন তখন। গ্রামেগঞ্জে আস্ত মসলা সংগ্রহ করে গুঁড়ো করে রাখা হয় কোরবানির ঈদের জন্য। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর রোজা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলার আমদানি মজুদ ছিল পর্যাপ্ত। কিন্তু রোজার ঈদে বিক্রি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও কোরবানির ঈদের আগে বাজারে চাহিদা অস্বাভাবিক কমে গেছে। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে পণ্যের অর্ডার করছেন না। যারা করছেন তারা আগের তুলনায় খুবই কম অর্ডার দিচ্ছেন। কারণে প্রায় প্রতিদিনই মসলা পণ্যের দাম কমছে। ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপে আমদানিকারক পর্যায়ে দাম কমিয়ে পণ্য বিক্রির ঘোষণা সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গরম মসলার দামে অস্বাভাবিক পতন ব্যবসায়ীদের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কোরবানির ঈদের আগে ব্যবসা হবে এমন আশায় অনেকে প্রচুর মসলা মজুদ করেছিলেন। কিন্তু দাম কমতে থাকায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন। দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকলে পাইকারি বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর লোকসানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার শঙ্কাও রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া তথ্যে দেখা গেছে, কয়েক মাস ধরে ভারতীয় শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বর্তমানে দাম কমতে কমতে এখন তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়া দেশীয় শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। এছাড়া দেশীয় আস্ত হলুদের দাম কেজিপ্রতি ১০০-১১০ টাকা এবং ভারতীয় হলুদের দাম ৯০-৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ভারতীয় জিরার দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা কমে ২৬০ টাকায়, আফগানিস্তানের জিরা ৩২০ টাকায়, এলাচের দাম প্রায় ৭০০ টাকা কমে হাজার ৫০০ টাকায়, দারচিনি ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকায়, মিষ্টি জিরা ৯৫ টাকায়, মিষ্টি আলু বোখারা ২৮০ টাকায়, কাঠবাদাম ৬৫০ টাকায়, কাজুবাদাম ৭৫০ টাকায়, আস্ত ধনিয়া ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়, আস্ত বাদাম ৯০-৯৫ টাকায় ভারতীয় বাদাম ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও গোলমরিচের দাম প্রায় ৫০ টাকা কমে ৩৮০ টাকায়, সাদা গোলমরিচ সমপরিমাণ কমে ৫৫০ টাকায়, লবঙ্গ ৬৫০ টাকায়, কালিজিরা ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, মেথি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বণিক বার্তাকে বলেন, মানুষের কাছে নগদ অর্থের সংকট রয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতাসহ চাকরির অনিশ্চয়তায় মানুষ বিলাসপণ্যের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। কোরবানির ঈদের আগে মানুষের গরম মসলা ক্রয় করার প্রবণতা থাকে। বছর কোরবানি দিতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও অনেকে সন্দিহান। এসব প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে। আমদানীকৃত পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকঋণ পরিশোধের চাপ রয়েছে। কারণে কম দামে হলেও পণ্য ছেড়ে দিতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চাহিদা না থাকায় প্রতিদিনই দাম কমছে গরম মসলার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন