জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি

১০৭ কোটি টাকা ঋণের ৯৭% অনাদায়ী

জেসমিন মলি

মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১০৭ কোটি টাকার বেশি। মূলত মৎস্যজীবীদের নৌকাসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনায় সহায়তার উদ্দেশ্য থেকে ঋণ বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের চূড়ান্ত সময়সীমা অনেক আগে পেরিয়ে গেলেও এখনো অনাদায়ী রয়ে গেছে এর ৯৭ শতাংশ।

বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরপর বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক মৎস্যজীবীর পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। আবার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অর্জন হলেও কেউ কেউ তা পরিশোধে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সমবায় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৎস্যজীবীদের নৌকা মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার জন্য বিভিন্ন সময়ে দেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ১০৭ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র কোটি ৩২ লাখ টাকার কিছু বেশি। বাকি অর্থের পুরোটাই অনাদায়ী বা খেলাপি হয়ে পড়েছে।

জানা গিয়েছে, ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য তত্পরতা বাড়াতে এক পর্যায়ে লোন অফিসার নিয়োগ দেয়া হলেও তা কাজে লাগেনি। বরং ঋণ আদায়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, আদায় হয়েছে তার তুলনায় খুবই নগণ্য। পরে বাধ্য হয়ে সমিতির পক্ষ থেকে বেশকিছু সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। এরপর কিছু অর্থ আদায় হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বকেয়া ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত চূড়ান্ত সময়সীমা অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সমিতির পক্ষ থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ১৪০টি সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রিট মামলাও হয়েছে। ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে ৪০টি। দায়েরকৃত এসব মামলার তদারকিও সমিতির পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে। ঋণ আদায়ের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সার্টিফিকেট মামলা করার ফলে আগের তুলনায় ঋণ আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এখন পর্যন্ত আটটি সার্টিফিকেট মামলার শুনানি হয়েছে। এসব সার্টিফিকেট মামলা পরিচালনা করতে সমিতির খরচ হয়েছে কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি। এত সব প্রচেষ্টার পরও আদায়ের পরিমাণ মোট ঋণের শতাংশের ওপরে তোলা যায়নি।

ঋণ আদায়ের তত্পরতা বাড়াতে সমবায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক সমিতি সরেজমিনে পরিদর্শনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় সমিতিগুলোকে সক্রিয় করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করা। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের নিয়মিত তদারক করা।

সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মৎস্যজীবীদের এসব ঋণ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে। ঋণ আদায় করাও তাদের দায়িত্ব। ঋণ আদায় যাতে বাড়ানো যায়, আমরা সে বিষয়ে তদারকি বাড়িয়েছি।

বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি এফএম মাসুক নাজিম বণিক বার্তাকে বলেন, সমিতির দেয়া ঋণের একটি বড় অংশ আগের কমিটির আমলেই খেলাপি হয়ে পড়েছে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে এসব ঋণ আদায়ের। তবে ঋণ আদায় করতে যে টাকা খরচ হয়, শেষ পর্যন্ত সে অর্থও আদায় হয় না। সমবায় অধিদপ্তর আমাদের ওপর দায় চাপায় অথচ ঋণ দেয়ার সময় তারাও সবকিছু বিচার-বিবেচনার দায়িত্বে ছিল। অনেক সময় অনেক সক্ষম ঋণগ্রহীতাও ঋণ পরিশোধে আগ্রহ দেখান না। ফলে ঋণের একটি বড় অংশই খেলাপি হয়ে গেছে। তবে সমিতির পক্ষ থেকে ঋণ আদায়ের তত্পরতা চলমান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মৎস্যজীবীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব দুর্যোগে অনেক মৎস্যজীবীই তাদের প্রাণ হারান। অনেকে ঋণের টাকায় কেনা সম্বল নৌকাটিও হারান। ফলে তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মৎস্যজীবীকে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে বিবেচনা করা দরকার।

সমবায় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমবায় আইনে নিবন্ধিত বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, মাছ ধরার সরঞ্জাম ক্রয় তা ন্যায্যমূল্যে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ, সদস্যদের কল্যাণে মৎস্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং জলমহাল অধিগ্রহণসহ নানাবিধ কল্যাণমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৪ সালের ১২ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য হিসেবে রয়েছে দেশের মৎস্যজীবীদের ৯১টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন