ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘রহস্যময়’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের সমৃদ্ধকরণ অংশে এ আগুন লাগে।
ইরানি কর্মকর্তারা আগুন লাগার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর প্রমাণসহ কোনো কারণ প্রকাশ করছেন না।
অন্যদিকে অপরিচিত একটি গ্রুপ দাবি করছে, তারা এ হামলা চালিয়েছে।
খবর বিবিসি।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভানদি জানান, নাতাঞ্জের একটি নির্মাণাধীন শেডে আগুন লেগেছিল।
এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
আগুনে ধ্বংস হওয়া যন্ত্রপাতির বদলে সেখানে আরো উন্নত যন্ত্রপাতি বসানো হবে বলে তিনি জানান।
অগ্নিকাণ্ডে পারমাণবিক কেন্দ্রটির সেন্ট্রিফিউজ অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পেছনে সাইবার অন্তর্ঘাতমূলক কোনো ঘটনা থাকতে পারে বলে কয়েকজন ইরানি কর্মকর্তা মনে করছেন।
তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে বলা হয়েছে, ‘সাইবার হামলার কারণে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটতে পারে।’ তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেননি তারা।
এদিকে বিবিসির এক সাংবাদিকের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে ‘হোমল্যান্ড চিতা’
নামধারী একটি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা এ হামলা চালিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘণ্টা দুয়েক পর এ ই-মেইল পাঠায় তারা।
তারা দাবি করে, একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তারা এবং ইরানি কর্তৃপক্ষ চাইলেও তা লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন লাগার মতো সংবেদনশীল একটি বিষয় সম্পর্কে যেখানে ঘটনার কয়েকদিন পর জানা গেল, তখন মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে এমন দাবি সন্দেহের উদ্রেক করে বৈকি।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে এ সেন্ট্রিফিউজের দরকার হয়।
এ ইউরেনিয়াম রিঅ্যাক্টর জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়, আবার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহূত হয়।
বেহরুজ কামালভানদি জানান, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ‘নিরাপত্তাজনিত কারণ’
দেখিয়ে নাতাঞ্জের আগুন নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার কারণে বেশ কিছুদিন কেন্দ্রটিতে অ্যাডভান্সড সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই জায়গায় আরো বড় একটি ভবন তৈরি করা হবে।
সেখানে আরো উন্নত যন্ত্রপাতি থাকবে।’
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আংশিক পোড়া একটি ভবনের ছবি প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্লেষকরা এ ভবনটিকে একটি নতুন সেন্ট্রিফিউজ সংযোজন কারখানা হিসেবে শনাক্ত করেছেন।
গত সপ্তাহে ইরানে আরো কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
নাতাঞ্জের এ ঘটনার ছয়দিন আগে ইরানের পারচিন সামরিক কমপ্লেক্সের কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
‘গ্যাস লিকেজের’
কারণে ওই বিস্ফোরণটি হয়েছিল বলে ইরানের কর্তৃপক্ষ জানায়।
কিন্তু বিস্ফোরণটি সামরিক কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন স্থাপনায় ঘটেছিল বলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে দাবি করেছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।