করোনায় ‘নব্য দরিদ্রে’ পরিণত হয়েছে চিলির মধ্যবিত্ত শ্রেণী

বণিক বার্তা ডেস্ক

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চিলির যে উত্থান পর্ব, তাতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণী কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে মাত্র তিন মাসেই সেই মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশ এখন দরিদ্রে পরিণত হয়েছে গত অক্টোবরে বৈষম্যবিরোধী এক আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির জনগণ বেশ কয়েক মাস ধরে চলমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল মূলত মধ্যবিত্তরাই, যা দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল এরপর যখন এসব ব্যবসা ফের কার্যক্রমে ফিরতে শুরু করে, ঠিক তখনই চিলিতে মধ্য মার্চে আঘাত হানে কভিড-১৯

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চমাত্রায় ঋণ পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় সহায়তার অভাবে চিলির মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বড় একটি অংশ ভাইরাসের সংক্রমণজনিত প্রভাবে মারাত্মক আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সেন্টার ফর সোস্যাল কনফ্লিক্ট অ্যান্ড কোহেসন স্টাডিজের (সিওইএস) সহকারী ব্যবস্থাপক দান্তে কন্ত্রেরাস বলেন, চিলির সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশই এখন শুধু নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কন্ত্রেরাস আরো বলেন, তাদের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে এরই মধ্যে দারিদ্র্যের হার থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে

এদিকে চলমান স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরি পারিবারিক তহবিল চালু করেছে দেশটির সরকার কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৪৯০ ডলারের কম, কেবল তারাই তহবিলের অন্তর্ভুক্ত হবে ফলে সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় আসবে দেশটির মাত্র ৩৪ শতাংশ পরিবার এর মানে হলো, চিলির পুরো মধ্যবিত্ত কেউই কার্যক্রম থেকে কিছু পাবে না

কন্ত্রেরাস বলেন, মূলত চিলিতে পারিবারিক আয়ের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে কোনো পরিবার দরিদ্রাবস্থা কাটিয়ে উঠছে, আবার অনেক পরিবার পুনরায় দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে আর অস্থির ভঙ্গুর অবস্থার কারণে পরিবারগুলোর পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না

মাত্র এক বছরের মধ্যে উচ্চমধ্যবিত্তদের পাড়ায় বাসবাসকারী সফল সচ্ছল প্রকৌশলী থেকে দরিদ্রে পরিণত হয়েছেন পাবলো মার্টিনেজ ৪৪ বছর বয়সী মানুষটির বেঁচে থাকার অবলম্বন বলতে এখন আর তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই মূলত ২০১৯ সালের মার্চে তার চাকরি চলে যায় এরপর তিনি আর নতুন করে উপযুক্ত কোনো চাকরি খুঁজে পাননি প্রথম কয়েক মাস তিনি জমানো বেকারত্ব বীমার টাকায় চলেছেন কিন্তু এর পরই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে বাধ্য হয়ে তিনি রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম উবারে চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কিন্তু গত অক্টোবরেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তার আয় কমে যায় আর করোনা লকডাউনের কারণে পুরোপুরি উপার্জনহীন হয়ে পড়েন তিনি

মার্টিনেজ বলেন, আগে হয়তো পরিস্থিতি জটিল ছিল, কিন্তু এখন আমরা আর্থিকভাবে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে গেছি আগে মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই ছিলাম তবে এখন আর আমার পক্ষে বাসা ভাড়া দেয়া সম্ভব হচ্ছে না পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বেঁচে থাকা বাসা ভাড়ার মধ্যে আমাদের যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে মার্টিনেজ জানান, এখন তিনি তার স্ত্রী উপহার বিক্রির একটি দোকান খুলেছেন একই সঙ্গে অনলাইনে পিয়ানো গিটার শেখাচ্ছেন মার্টিনেজ কিন্তু থেকে যে উপার্জন হচ্ছে, তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ অসম্ভব অথচ তারা রাষ্ট্রীয় সহায়তাও পাচ্ছেন না মার্টিনেজের মতো একই সমস্যায় পড়েছে দেশটির বহু মধ্যবিত্ত মানুষ

মূলত ১৯৯০-এর দশক থেকেই চিলির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এর ফলে দেশটির দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে শতাংশে এসে দাঁড়ায় কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ঋণের ওপর ভর করে নিজেদের জীবনযাপনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে ফলে বর্তমানে এসব পরিবারের ৭০ শতাংশই প্রচুর ঋণের বোঝা বহন করছে আর অবস্থায় পরিস্থিতি আরো বিপর্যস্ত করে তুলেছে করোনার প্রভাব

এএফপি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন