দুই বছর আগে আমি পোল্যান্ডের কাটোউইকে গিয়েছিলাম ই-স্পোর্টসের ওপর একটি ছোট ভিডিও ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য।
শহরের স্পোডেক অ্যারেনা বিশ্বের বৃহত্তম কিছু পেশাদার গেমিং ইভেন্টের আয়োজন করে।
যেখানে ইন্টেল এক্সট্রিম মাস্টার্স ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপও রয়েছে।
যদিও আইইএম ২০১৮ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আয়োজন।
যেখানে মিলিয়ন ডলার প্রাইজের পাশাপাশি পছন্দের দলকে সমর্থন জানাতে হাজির হয়েছিল ১ লাখ দর্শক।
গত তিন মাসে মূলধারার স্পোর্টস ও ই-স্পোর্টসের মাঝে সবচেয়ে বেশি সমন্বয় দেখা গেছে।
দল ও প্রমোটররা হঠাৎ করেই তাদের খালি হয়ে যাওয়া সূচি তাদের খেলার ভিডিও গেমস ভার্সন দিয়ে পূরণ করে, এটি তারা করে ভক্ত ও স্পন্সর সংস্থাগুলোকে খুশি রাখার জন্য।
স্কাই স্পোর্টস, ফক্স স্পোর্টস ও ইএসপিএনের মতো ব্রডকাস্টারগুলো ই-স্পোর্টসগুলো কাভারও করেছে।
যেখানে ফুটবল ও সকার তারকারা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফর্মুলা ওয়ান গ্র্যান্ড প্রিঁর গোটা মৌসুম চালিয়েছে এর অফিশিয়াল লাইসেন্সযুক্ত ভিডিও গেম ব্যবহার করে।
অস্ট্রেলিয়ায় এনআরএলের দলগুলো রাগবির চেয়ে ফোর্টনিটেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।
কিন্তু মূলধারার খেলা যেমন প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল টিভিতে ফিরে এসেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এখন ই-স্পোর্টসের ভবিষ্যৎ কী? এবারের লাইমলাইট কি নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট? সম্ভবত, যদিও তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না।
যদি ই-স্পোর্টস প্রাইম টাইমের ভবিষ্যৎ থাকে, এটি হয়তো সেলেব্রিটি মাস্টারশেফের মতো আকর্ষণীয় হতে পারে।
মূলে ফিরে যাওয়া
লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ই-স্পোর্টস দ্রুতই সবাই গ্রহণ করতে শুরু করে।
কাউন্টার স্ট্রাইকের মতো ভিডিও গেমই গত দশকে কেবল স্টেডিয়াম পূর্ণ করতে পেরেছিল।
এর আগে ই-স্পোর্টস ম্যাচগুলো সব ইন্টারনেটে অনুষ্ঠিত হতো, কোয়ালিফায়িং রাউন্ডগুলোতে এখনো তা-ই হয়।
ব্লিচার্জ যেমনটা বলেন, ১০ বছর পেছনে সবকিছু নিয়ে যাওয়া কোনো আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল না।
আমরা এখনো তা চালাতে সক্ষম ছিলাম।
দলগুলোর জন্য মানিয়ে নেয়া খুব একটা সহজ ছিল না।
যদিও কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে বেশি প্রস্তুত ছিল।
মুষ্টিমেয় দল কিছু সময়ের জন্য ই-স্পোর্টসে ছড়িয়ে পড়ে।
যেমন ডালাস কাউবয়েজের একটি বড় ই-স্পোর্টস সেন্টার রয়েছে।
ইউরোপে প্রিমিয়ার লিগ নিজেদের মূল সূচির পাশাপাশি ফিফা ম্যাচগুলোর জন্যও একটি মৌসুম রাখে।
অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল ফেডারেশনও একইভাবে ই-স্পোর্টস লিগ পরিচালনা করে।
কিন্তু মোটরস্পোর্টস ছিল সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত এবং দ্রুত সাড়া দিয়েছে তারা।
এফআইএ, যারা খেলাটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালনা করে অনেকদিন ধরেই ই-স্পোর্টসে বিনিয়োগ করে আসছে।
ফর্মুলা ওয়ান ২০১৭ সাল থেকে অফিশিয়ালি লাইসেন্স ভিডিও গেমে একটি চ্যাম্পিয়নশিপ পরিচালনা করে আসছে।
অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যখনই লাইভ ইভেন্ট থেমে যায়, তখনই ফর্মুলা ওয়ান, ফর্মুলা ই, ইন্ডিকার ও নাসকার দ্রুতই ভিডিও গেম ভার্সন সামনে নিয়ে আসে।
গিফনির ই-স্পোর্টস প্রধান পল কেন্ট বলেন, ২০২০ সালে ভার্চুয়াল গ্র্যান্ড প্রিঁ পাঁচদিনের মধ্যে একসঙ্গে করা হয়েছিল।
দাতব্য ইভেন্ট হিসেবে এটি আয়োজন করা হয়েছিল।
ফর্মুলা ওয়ানের ই-স্পোর্টস এবং মূলধারার খেলোয়াড়রা ছাড়াও এখানে অন্যান্য খেলার তারকাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
যদিও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ ছিল।
প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ইউরোপজুড়ে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ডজনের বেশি বৃহৎ সিমুলেশন রিগ আনা, যেখানে ট্রান্সপোর্ট হাবগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
ফর্মুলা ওয়ান ই-স্পোর্টস ব্যবহার করে মূলত ককপিট সাইজের সিমুলেটর।
যা পাঠানো সহজ ছিল না । কিন্তু এর চেয়ে বেশি কঠিন ভালো ভালো ওয়েবক্যাম খুঁজে বের করা।
বড় সুবিধা
মোটরস্পোর্টসের একটা বড় এবং অন্যদের এগিয়ে থাকার ব্যাপার ছিল।
যেমন ফুটবলে ফিফায় ডিজিটাল মেসি হিসেবে খেললে সেটি মেসির খেলার মতো কিছু না।
মূল স্টেডিয়ামে গোল করা জয়স্টিক এবং বাটন চেপে গোল করার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।
বিপরীতে মোটরস্পোর্টসে অনেক বেশি বাস্তবতার স্বাদ পাওয়া যায়।
রেসিং সিমুলেটরগুলোতে ট্র্যাকগুলো সাধারণত লেজার ব্যবহার করে স্ক্যান করা হয়।
খেলোয়াড়রা সিমুলেশন রিগস দিয়ে তাদের গাড়ির চাকা ও প্যাডেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তারা গতি বাড়াতে পারে এবং অন্য গাড়িকে এড়াতে পারে।
তারা তাদের জ্বালানি ও টায়ার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মূলত রেসিং সিমসগুলো এত ভালো যে ফর্মুলাগুলো গাড়ির নকশা পরীক্ষা করতে সিমুলেশন ব্যবহার করে।
মার্চে বাস্তবে রেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও কয়েকজন ফর্মুলা ড্রাইভারের খেলার প্রয়োজন ছিল।
খেলোয়াড়দের সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে থাকতে হয়।
কেউ কেউ উদ্বিগ্ন ছিল যে তারা হয়তো আগের মতো দ্রুত গাড়ি চালাতে পারবে না।
যদিও মৌসুমের শেষে ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার গিওর্গে রাসেল সামনে আসে বিশ্বের একজন সেরা ই-স্পোর্টস ড্রাইভার হিসেবে।
এই রেস এতটাই বাস্তব যে বাস্তব দুনিয়ার একজন ড্রাইভার দক্ষতা দিয়ে ভার্চুয়াল রেসও জিতে নিতে পারে।
গিফনিটি বলেছেন, লকডাউনে রেকর্ড ৩০ মিলিয়ন দর্শক ফর্মুলা ওয়ান রেস দেখেছে।
এই সফলতার পর গিফনিটি নতুন ধরনের ইভেন্টের কথা ভাবছে।
পাশাপাশি আসল স্পোর্টস দলগুলো, প্রচারক এবং ব্রডকাস্টাররা সবসময় দর্শক ও স্পন্সরদের আকর্ষণ করার নতুন ধরনের উপায় খুঁজতে থাকে।
এক্ষেত্রে গত তিন মাসের অভিজ্ঞতা তাদের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ