মনে হচ্ছে চীন কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঝড় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
বেইজিংয়ের একটি বাজার থেকে একটি প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে গত মাসে অন্তত ৩২৮ জন নতুনভাবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে।
যার ফলে দেশটির রাজধানী শহরকে আংশিকভাবে শাটডাউন করতে হয়।
এরপর গত বুধবার বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় মাত্র একটি নিশ্চিত কেসের কথা।
পাশাপাশি জানানো হয় দুটি উপসর্গবিহীন কেসের কথাও।
তারও আগে ১১ জুন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফেনগাটি জেলার জিনফাদি পাইকারি ফুড মার্কেটে জোরালো ক্যাম্পেইন চালানোর পর নতুন একটি কেস সামনে আসে।
যখন এটি সামনে আসে তখন বেইজিং নতুন কোনো স্থানীয় কেস ছাড়াই ৫৬ দিন পার করে দিয়েছিল।
সে সঙ্গে নতুন কোনো মৃত্যুর খবরও রেকর্ড করা হয়নি এর মাঝে।
সাংহাইয়ের হুয়াশান হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক জাং ওয়েনহং ব্রডকাস্টার সিসিটিভিকে বলেন, বেইজিং একটি পরিষ্কার উদাহরণ সবার সামনে তুলে ধরেছে যে চীন নতুন ঝড় সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।
সেটা হতে পারে ঘরোয়া কিংবা বাইরে থেকে আসা।
এটা সম্ভব হয়েছে প্রচার ও মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানোর মাধ্যমে।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কভিড-১৯-এর পুনরুত্থানের পর শহরের ২২ মিলিয়নের মধ্যে ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে।
স্কুল, বার ও বিউটি পার্লারগুলো ভাইরাসের বিস্তার রোধের লক্ষ্যে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এদিকে বেইজিংয়ের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে ১১টি জেলা শহরের ৪৭টি রাস্তায় রোগ শনাক্ত করেছে।
তখন ডজনের বেশি আবাসিক এলাকাগুলো কঠোরভাবে লকডাউনে রাখা হয়েছিল।
এর আগে গত ডিসেম্বরে উহানে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের অবির্ভাব ঘটে।
গত কয়েক মাসে এই ভয় সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে যে প্রথম ঝড়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঝড় অনেক বেশি সংক্রামক ও ভয়ংকর হতে পারে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে চীনে
নতুন করে নিয়ম করা হয় যে কেউ যদি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে তবে এবার ২৮ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এটা বরং বাড়াবাড়ি রকমের সতর্কতা মনে হতে পারে।
কারণ মাত্র ৫ শতাংশ আক্রান্ত লোকের ইনকিউবেশন পিরিয়ড হতে পারে ১৪ দিনের বেশি।
কিন্তু এটা এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য যারা ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির স্বার্থের ওপর বেশি জোর দিয়েছে।
ভাইরাসের সংক্রামক ক্ষমতা ও উপসর্গবিহীন সংক্রমণ অংশ চীনজুড়ে আরো প্রাদুর্ভাবকে অনিবার্য করে তুলেছে বলে মনে করেন হংকং ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেন কাউলিং।
তিনি বলেন, এই ইঁদুর দৌড় খেলা চলতে পারে সপ্তাহ কিংবা মাসজুড়ে যতক্ষণ না আমরা এটা মোকাবেলার জন্য আরো টেকসই উপায় বের করতে পারি।
সে সঙ্গে এখানে যুক্ত থাকতে হবে গণহারে পরীক্ষা ও লকডাউনের বিধিনিষেধও।
তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে নেতৃত্বের বৈপরীত্য স্পষ্টভাবে সামনে আসে।
যেখানে চীনা অফিশিয়ালরা জিনফাদি বাজারের ঘটনাকে উল্লেখ করেছে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’,
‘যুদ্ধাবস্থা’
ও ‘বিস্ফোরণ’
হিসেবে।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেছেন ভাইরাস মুহূর্তেই উধাও হয়ে যাবে।
অথচ যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্তের দিক থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে।
কাওলিং বলেন, আমি মনে করি না ভাইরাস উধাও হয়ে যাবে।
এটা একেবারেই ফালতু কথা।
কিন্তু তিনি (ট্রাম্প) অবশেষে বলেছেন মাস্ক পরা সবার জন্য উপকারী।
নেতিবাচক প্রভাব
চীনের এমন আপসহীন প্রতিক্রিয়ার অবশ্য কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।
তারা জিনফাদিতে নতুন করে শুরু হওয়া প্রাদুর্ভাবকে বেশ তাড়াহুড়ো করে বিদেশ থেকে আগত বলে চিত্রিত করতে থাকে।
কর্তৃপক্ষ বলতে থাকে ইউরোপ থেকে আনা স্যামন মাছের মধ্য দিয়েই মূলত ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এরপর দেশটির হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও সুপার মার্কেটগুলো তাদের কাছে জমা থাকা সামুদ্রিক মাছ এবং আমদানীকৃত হিমায়িত খাবারগুলো সব নষ্ট করে ফেলেছে।
যদিও এর আগে সরকারের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন যে জীবন্ত বা হিমায়িত স্যামনের মধ্যে ভাইরাস থেকে যাওয়া মোটেই সম্ভব না।
টাইম ম্যাগাজিন