দেখা নেই বেপারির

কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাবনার খামারিরা

শফিউল আলম দুলাল পাবনা

চলতি মাসের শেষ অথবা আগামী মাসের শুরুতে পালন হওয়ার কথা রয়েছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছর ঈদুল আজহার এক মাস আগে থেকেই পাবনায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনতেন বেপারিরা। কিন্তু বছর নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের দেখা মিলছে না। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কোরবানির পশুর হাটেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। অবস্থায় হাটে পশুর বেচাকেনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই চলতি বছর কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া, বেড়া সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় নয় হাজার খামারি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ভাঙ্গুড়া, বেড়া সাঁথিয়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু লালন-পালনকারী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত সারা দেশে। ওই তিন উপজেলার প্রায় নয় হাজার খামারে ৫০ হাজারেরও বেশি গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য পালন করা হয়। প্রতি বছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর বেপারিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। এছাড়া দুই উপজেলার পশুর হাটগুলো থেকেও বেপারিরা গরু কিনে দেশের বিভিন্ন জেলার হাটে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার আর বেপারিদের দেখা মিলছে না। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। তাছাড়া আগাম বর্ষা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ঘাসের খেত।

খামারিরা জানান, তিন মাসের ব্যবধানে ভুষির বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। অন্যান্য গো-খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থায় গরু পালন বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের খামারি মান্নান মাস্টার জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী বেপারিদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতিতে আমার মতো অনেক খামারি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা, এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি করতে হতে পারে। তাই কোরবানির হাট শুরু হতে মাসখানেক দেরি থাকলেও গরু পালনকারীরা এখনই তাদের গরু বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বেড়া-সাঁথিয়ার অন্যতম গরু ব্যবসায়ী বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার আব্দুল মোমিন। তিনি জানান, অন্যান্য বছর গরুর বেপারিরা এত দিনে ঢাকার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে খামারিদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করে দেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ বেপারি ভয়ে গরু কিনছেন না। গত বছর তিনি এত দিনে ৬০টির মতো গরু কিনেছিলেন বলে জানান। কিন্তু এবার কেনেননি।

তিনি আরো জানান, করোনার কারণে হাটে ক্রেতার আগমন গরুর দাম কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই তিনি গরু কিনছেন না।

সাঁথিয়া উপজেলার আফড়া গ্রামের খামারি শাজাহান আলী জানান, এবার কপালে যে কী আছে তা বুঝতে পারছি না। এখন পর্যন্ত একজন বেপারিও গরু দেখতে আসেননি। হাটেও গরুর দাম নেই। গরু বিক্রি করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর খামারি কৃষক গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।

হাটে গরু বিক্রি করতে আসা বেড়া কুশিয়ারা গ্রামের ছাত্তার আলী বলেন, সকাল ১০টায় তিনটি গরু আনছি, এহন বাজে ১টা কোনো বেপারি দামই কয় নাই।

তিনি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছি। দোকান বাকি করে গরু পালন করেছি, দোকানদারদের হালখাতা করতে হবে। এখন গরু বিক্রি করতে না পারলে বিপদে পড়তে হবে। অন্য বছর সময় বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার হাটে এনেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। সামনের কোরবানির হাটে গরুর দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। ছাগলের হাট ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়, বেপারির সংখ্যা নেই বললেই চলে। অনেক ছাগল বিক্রেতাকে হাট থেকে ছাগল ফিরিয়ে আনতে দেখা গেছে।

করমজা চতুর হাটের পশুর হাট পরিচালনাকারীদের অন্যতম মিজানুর রহমান (উকিল) বলেন, আমাদের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সর্বসাধারণের জন্য মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ ঘোষণা করেছি। হাটে বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। অন্য বছরের মতো ঢাকা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে বেপারিরা আসছেন না। কমবেশি যা বিক্রি হচ্ছে, তা স্থানীয় বেপারিদের কাছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন জানান, চলতি বছর জেলার নয়টি উপজেলায় লক্ষাধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক দুর্যোগের কারণে খামারিরা লোকসানের মুখ দেখতে পারেন। করোনার কারণে হাটবাজারে খুচরা মাংস বিক্রিও কমে গেছে। ফলে নিয়মিত পশু কেনাবেচার হারও কমেছে। তবে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন