জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব প্রাইভেট রিফাইনারিতে সাময়িকভাবে আগামী ৩ মাসের জন্য কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এর ফলে বর্তর্মান মজুদ শেষ হওয়ার পর কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেডের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ১২ টি বেসরকারি রিফাইনারিতে এ বছরের জুলাই থেকে ৩ মাসের জন্য কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পেট্রোবাংলা। একমাত্র কাঁচামাল হওয়ার কারণে কনডেনসেট ছাড়া উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব নয়। কি কারণে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে কিছু জানানো হয় নি। তবে কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত পেট্রোলের মান বিএসটিআই নির্ধারিত মানের তুলনায় নিম্নমানের্, এমন কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। কভিড-১৯ এর এই সময়ে এভাবে হুট করে কনডেনসেট সরবরাহ স্থগিত করে দেয়া উচিত হয় নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম তিন প্রান্তিকে সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৩৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ২১ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৫ পয়সা।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের পরিচালনা পর্ষদ। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১২ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৬ পয়সা। ৩০ জুন এনএভিপিএস ছিল ১৪ টাকা ৫৭ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১৪ টাকা ৫৮ পয়সা।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ২ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। তার আগে ২০১৬ হিসাব বছরে ২৫ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ হিসাব বছরে ১৫ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
প্রসঙ্গত, চিটাগং ভেজিটেবল অয়েল নামে ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বর্তমান সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি। ফুলকপি ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল ও গোল্ড কাপ ব্র্যান্ডের বাটার অয়েল ছিল তাদের মূল পণ্য। সে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে না পেরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে কোম্পানিটি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশনে যায়। চিটাগং ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানি আগে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল নাম নেয়ার পর তা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে চলে যায়।
বর্তমানে এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার। এর ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ২২ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের শেয়ার সর্বশেষ ১১৫ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৭৭ টাকা ও ১৫৭ টাকা।