নদীপথে আমদানি পণ্য পরিবহন

ব্যবহার করা যাবে না বাইরে থেকে ভাড়া করা নৌযান

রাশেদ এইচ চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরো

নদীপথে আমদানি পণ্য পরিবহনের জন্য শিল্পমালিকদের এখন থেকে নিজস্ব নৌযান ব্যবহার করতে হবে। এজন্য বাইরে থেকে নৌযান ভাড়া করে আনা যাবে না। অতিরিক্ত জাহাজের প্রয়োজন পড়লে শুধু স্থানীয় জাহাজমালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকেই তা ভাড়া নেয়া যাবে। চলতি সপ্তাহেই ধরনের একটি আদেশ জারি করে এর বাস্তবায়নে যেতে পারে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। 

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নদীপথে বছরে গড়ে পাঁচ কোটি টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার, জিপসাম, গম, মটর ডাল, সরিষা, ভুট্টা, পাথর প্রভৃতি। বড় আমদানিকারকরা নিজেদের জাহাজে করে এবং বাড়তি প্রয়োজনে ভাড়ায় নিয়ে নৌপথে এসব আমদানি পণ্য পরিবহন করে থাকে। ডব্লিউটিসির পাশাপাশি বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, বসুন্ধরা গ্রুপসহ মোট ২৫টি শিল্প গ্রুপ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পণ্য পরিবহন করছে। আমদানিকারদের পক্ষে পণ্য পরিবহন করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোও (পণ্যের এজেন্ট) নিজেরাই জাহাজ পরিচালনা করছে।

প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, নৌ-পরিবহনে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিল্পমালিক ডব্লিউটিসির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা এরই মধ্যে একটি সভা করেছি। শিল্প-কারখানার মালিকরা বাইরে থেকে ভাড়া করে জাহাজ এনে তাদের বহরকে বড় করতে পারবেন না। এছাড়া অবৈধ কোনো নৌযানে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবাহিত হবে না। এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে -সংক্রান্ত আদেশ দেয়া হবে।

বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে তা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। কারণ এতে পণ্যের মূল্য বেড়ে একটি অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

বিষয়ে ক্রাউন সিমেন্ট কংক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির বণিক বার্তাকে বলেন, কারখানা মালিকদের ডব্লিউটিসির ওপর নির্ভরশীল করে রাখতে নেয়া এমন পদক্ষেপ কোনোদিক থেকেই ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবং পণ্য পরিবহনের খরচ কমানোর জন্য বড় বড় কারখানার মালিক ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা জাহাজ ক্রয় করেছেন। এখানে বিষয়টি হলো ডব্লিউটিসি থেকে নিলে যে ভাড়া দিতে হয়, বাইরে থেকে ভাড়া করলে তার চেয়ে অনেক কম হয়। এখন ডব্লিউটিসির ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি করে রাখলে নিশ্চিতভাবে আমাদের ব্যয় বেড়ে যাবে। কোনো সন্দেহ নেই, এতে করে পণ্যের মূল্যও বাড়বে। ডব্লিউটিসির সদস্যরাও তো ভাড়া করে জাহাজ এনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে ভাড়া কত হবে, একটি ট্রেড বডির সেটা নির্ধারণ করা উচিত নয়। এটা সরকার একটি যৌক্তিক জায়গা থেকে ঠিক করে দিতে পারে।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আমার আমদানি করা পণ্য আমি নদীপথে কীভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাব, সেটা তো আমার একান্ত বিষয় হওয়ার কথা ছিল। ডব্লিউটিসি একটি বেসরকারি সংগঠন, যারা নিজেদের সুবিধার জন্য প্লাটফর্মটি তৈরি করেছে। নদীপথে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল বা নিত্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সুবিধামতো পরিবহন করতে পারাটাই যৌক্তিক একটি বিষয়। শিল্প-কারখানার মালিকদের পাশাপাশি যারা বড় পরিসরে আমদানি করছেন, তারা যদি নিজস্ব জাহাজে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সে পণ্য পৌঁছে দেয়, তবে অসুবিধাটা কোথায়? এতে তো ভোক্তাশ্রেণী লাভবান হবেন। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর সবার স্বার্থে নৌ-চলাচলকে স্বাভাবিক রাখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

জানতে চাইলে ডব্লিউটিসির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা কখনো অন্যায়ভাবে ভাড়ার বিষয়টি চাপিয়ে দিইনি।  

১৫ বছর ধরে আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড রেট চলছে। শিল্প-কারখানা মালিকদের মধ্যেও সবাই কিন্তু বাইরে থেকে জাহাজ নেয় না। সরকারি গেজেট অনুযায়ী শিল্প-কারখানার মালিকদের নদীপথে পরিবহনে ৫০ শতাংশ আমাদের মাধ্যমে পরিবহন করতে হবে। অথচ এটা মানা হচ্ছে না। এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। এতে করে ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণে চলাচলকারী লাইটারেজ জাহাজগুলো অলস বসে আছে। এতে কর্মরত ২০ হাজার লোক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে নদীপথে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন