চলতি বছরটা শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। তবে বছরের দ্বিতীয় মাস থেকেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দামে ধস নামতে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় মে মাসে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) ফুড প্রাইস ইনডেক্স বা খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৭ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। তবে এক মাসের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এ সূচকমান। গত জুনে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য ও আমিষপণ্যের দাম কমলেও চিনি, দুগ্ধপণ্য ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সূচকে। খবর এফএও।
গত জুনে এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্স (এফএফপিআই) দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ২ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯১ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। পরের মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে। মার্চ ও এপ্রিলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ১ পয়েন্ট ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্টে।
এফএওর প্রতিবেদন বলছে, গত মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য ও আমিষপণ্যের দাম কমলেও চিনি, দুগ্ধপণ্য ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এ সময় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় গত জুনে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় দাম ১ দশমিক ৯ শতাংশ কম ছিল। সংস্থাটির মতে, নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে খাদ্যশস্যের সাপ্লাই চেইন কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় গমের বাম্পার ফলন এ সূচকের পতনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। শুধু গম নয় বরং দেশে দেশে ভুট্টা, চাল ও যব উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির খবর খাদ্যশস্যের গড় দাম কমিয়ে দিয়েছে।
জুনে আমিষপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সূচকমান কমেছে ৬ পয়েন্ট। মহামারীর কারণে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আমিষপণ্যের রফতানি শুরু হয়েছে। তবে ইউরোপের দেশগুলো এখনো আমিষপণ্য আমদানিতে সতর্কতা অবলম্বন করছে। এ পরিস্থিতি এসব পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছে।
গত জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা ছিল ভোজ্যতেলের দাম। এ সময় ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ৬ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৮ পয়েন্ট বা ১১ দশমিক ৩ শতাংশ কম। এর মধ্য দিয়ে টানা চার মাস পর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল। সংস্থাটির মতে, লকডাউন উঠে যাওয়া চীনসহ শীর্ষ ভোক্তা কয়েকটি দেশ পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় দামে। বিশেষত ইউরোপের দেশগুলোয় বায়োডিজেল উৎপাদনে বিভিন্ন ভোজ্যতেলের চাহিদা বৃদ্ধি এর পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
দাম বেড়েছে চিনি ও দুগ্ধপণ্যের। গত মাসে বিশ্বজুড়ে চিনির গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৭৫ পয়েন্টে। আগের মাসের তুলনায় তা ৭ দশমিক ২ পয়েন্ট বা ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরুর করায় ব্রাজিলের চিনিকলগুলো ইথানল উৎপাদনে আখের ব্যবহার বাড়িয়েছে। এতে চিনি উৎপাদনে প্রভাব পরে বাড়তে শুরু করেছে দাম।
এদিকে গত জুনে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৯৮ দশমিক ২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে টানা চার মাস পর দুগ্ধপণ্যের গড় দাম বাড়ল। তবে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় গত জুনে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় দাম ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কম ছিল। মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আমদানি বাড়ানোয় এ সময় দুগ্ধপণ্যের গড় দাম বাড়তির দিকে ছিল।
