বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে ব্লুমবার্গের পর্যালোচনা

ভোক্তাব্যয় ও কর্মসংস্থানে চাপ সহসা কাটছে না

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক মন্দা ভাব কর্মসংস্থানে সংকোচন মানুষের মনে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার করেছে। তারা তাদের চাকরি আয়ের উৎস নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। অবস্থায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নগদ অর্থ সঞ্চয় করে রাখছে সাধারণ মানুষ। এতে গৃহস্থালি ব্যয়ের স্থবিরতা কাটছে না।

বর্তমানে অর্থনীতির স্বল্পমেয়াদি কিছু সূচকে উন্নতি হচ্ছে বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উত্তরণের জন্য অবশ্যই ভোক্তাব্যয়ের স্থবিরতা কাটাতে হবে। বিশ্বের সব দেশের সরকারের পরিকল্পনায়ই একে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারগুলোকে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যে স্বাভাবিক খরচের ধারায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে ভোক্তারা যেন কোনো উত্কণ্ঠায় না ভোগেন।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমনিতেই বেশ সংকটের মধ্যে রয়েছে। অবস্থায় ভোক্তাব্যয় কমে গেলে বা নগদ অর্থ সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি বেড়ে গেলে চাহিদার সংকট আরো বেড়ে যেতে পারে। এমনকি এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য চলতি মূলধন পাবে না আর। ফলে একসময় সেগুলো বন্ধও হয়ে যেতে পারে। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়বে কর্মসংস্থানে।

ব্লুমবার্গের পর্যালোচনায় বিশ্ব অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি কিছুটা ফুটে উঠেছে। চলতি বছরের বাকি সময়টা কেমন যেতে পারে, তারও সম্ভাব্য রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

কর্মসংস্থানে হতাশা: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে, তা প্রায় ১৪ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সমান। যদিও করোনার কারণে এখন পর্যন্ত বিশ্ব শ্রমবাজারে ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার চেয়ে কমই রয়েছে, তবুও আইএলও ধারণা করছে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে এই ক্ষত সারানো সম্ভব হবে না। এটি নিশ্চিতভাবেই মানুষের আয়, জীবনযাত্রার মান, গৃহস্থালি ব্যয় সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক কোনো খবর নয়।

তারল্য সংকটের আশঙ্কা: ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টসের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন ২০২০ অনুসারে, বিশ্বের অনেক দেশেই মানুষ এখন পূর্বসতর্কতার বশে নগদ অর্থ ধরে রাখছে। কারণ সামনের কয়েক বছরে কর্মসংস্থানের পরিবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর কাগুজে নোটের প্রচলন অনেকটা কমে গেছে। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত. ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন আরোপ করায় -কমার্সের প্রচলন বেড়েছে, যেখানে কাগুজে নোটের চেয়ে ভার্চুয়াল কারেন্সির প্রচলন বেশি। আর দ্বিতীয়ত. কাগুজে নোট প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বাহক হতে পারেএমন আশঙ্কা থেকেও অনেকে এর লেনদেন থেকে বিরত থাকছেন। কারণ যা- হোক, বাস্তবতা হলো, বর্তমানে মানুষের সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি বেড়েছে এবং গৃহস্থালি ব্যয় কাগুজে নোটের ব্যবহার কমে গেছে।

আশার পালে হাওয়া, অতঃপর ফের ধাক্কা: করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বেশ বড় ক্ষত তৈরি হয়েছে। পর্যন্ত দেশটিতে রেকর্ড ৪৮ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। তবে গত মাসে মার্কিন শ্রমবাজার প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। অবশ্য নতুন করে ভাইরাসটির সংক্রমণ ফিরে আসায় বাজারে উত্তরণের আশা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে।

এদিকে গত মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একে বিশেষজ্ঞরা প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন।

আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছুটা আগেই ইউরোপীয় অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে করোনা। মহামারীটি বেশ ভালো শিক্ষা দিয়েছে তাদের। কারণে পরবর্তী মহামারী কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য এমন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। যেমন ইতালি তাদের আর্থিক বাজারে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটি এই প্রথমবারের মতো রিটেইল-বেজ সিকিউরিটি বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে, যেন দেশটির আর্থিক খাতের সুরক্ষায় জনগণও অংশগ্রহণ করতে পারে।

সংকটে এশিয়া: চলতি বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষ পদগুলোর ৩০ শতাংশে নারীদের দেখতে চেয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। কিন্তু করোনা তার সে পরিকল্পনায় বাদ সেধেছে। জাপানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কেবল এপ্রিলেই প্রায় সাত লাখ নারী দেশটির শ্রমবাজার থেকে ছিটকে পড়েছেন।

এদিকে করোনার প্রভাব তো রয়েছেই, এর সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সীমান্তে উত্তেজনা। দুইয়ের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার অন্যতম দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারত চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে। ২০০৫ সালের পর এবারই চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে। ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন