উহানের ল্যাবের সংরক্ষিত নমুনাই কি মহামারীর জন্য দায়ী?

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিজ্ঞানীরা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন যে উহানের ল্যাবরেটরিতে বছরের পর বছর ধরে রাখা করোনাভাইরাস কি প্রাকৃতিকভাবেই মিউটেট হয়েছে, নাকি জেনেটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে এই ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে কভিড-১৯-এর কারণ হয়েছে।

২০০৩ সালে সার্স মহামারী সামনে আসার পর চীনের গবেষকরা সম্ভাব্য নতুন করোনাভাইরাসকে শনাক্ত বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে বাদুড়ের বসতিগুলোতে হানা দিয়ে আসছিল। এসব হচ্ছিল মূলত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (ডব্লিউআইভি)

বিষয় নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ব্যাপকভাবে সম্মানিত, তাদেরই একজন হলেন . শি জেনগ্লি। সহকর্মীদের মাঝে যিনি পরিচিত ব্যাট ওমেন নামে। তিনি ফেব্রুয়ারিতে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত একাডেমিক গবেষণা পত্রটির সহরচয়িতা ছিলেন।

ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জেনেটিক বিবরণ দেয়ার পাশাপাশি নেচার- প্রকাশিত . শির গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় যে উহান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউট আরএটিজি১৩ নামক বাদুড় থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, যার সঙ্গে কভিড-১৯-এর যে ভাইরাস তার ৯৬. শতাংশ মিল রয়েছে, এটিই তখন পর্যন্ত নিকটতম আবিষ্কার ছিল। তবে বৈজ্ঞানিকদের অধিকাংশের মত ছিল যে দুটি ভাইরাসের একই হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেউ কেউ বলছিলেন শতাংশ জেনেটিক পার্থক্য দূর হতে ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

অনেক বিজ্ঞানী খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিশ্বাস করছেন যে সার্স-কোভ--এর জেনেটিক কোড প্রাকৃতিকভাবে মিউটেড হয়েছে, এটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়নি। সেখানে আরো কেউ কেউ আছেন যারা বিশ্বাস করেন, দুটি ভাইরাসের একই হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

আরএটিজি১৩ কে সার্স-কোভ- তে পরিণত করার জন্য যে ধরনের কৌশলগুলো প্রয়োজন তা উহানে অতীতে চলমান কাজের সঙ্গে একেবারেই অভিন্ন, এই অভিযোগ করেছেন নিউ জার্সির রুটগার্স ইউনিভার্সিটির ওয়াকসম্যান ইনস্টিটিউটের মাইক্রোবায়োলজির প্রফেসর রিচার্ড ইবরাইট। দ্য সানডে টাইমসকে তিনি বলেন, সেই একই কৌশল, সেই একই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কৌশল, যা কিনা শুরুর দিকে ব্যবহার করা হয়েছিল আরএটিজি১৩-এর ক্ষেত্রে। ফলে সার্স-কোভ--এর সঙ্গে অভিন্ন ভাইরাস তৈরি হবে।

তবে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর মার্টিন হাইবির্ড মনে করেন এটা করা কঠিন হবে। তার মতে, এটা একই ভাইরাস নয় এবং তিনি মনে করেন না যে খুব সহজেই একটি অন্যটির মাঝে চালিত করা যায়।

প্রাকৃতিকভাবে মিউটেট হতে কত সময় লাগে তা নিয়েও দুজন দ্বিমত পোষণ করেন। প্রফেসর হাইবির্ড মনে করেন এটি হতে প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। কিন্তু প্রফেসর ইব্রাইট বলেছেন, এটি মোটেই কার্যকর ধারণা নয়। তিনি মনে করেন, যখন একটি ভাইরাস হোস্ট পরিবর্তন করে এবং নতুন হোস্টের সঙ্গে মানিয়ে নেয় তখন এর বিকাশের হার অনেক উচ্চতর পর্যায়ের হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, এটা খুবই সম্ভব যে আরএটিজি১৩ যখন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তখন এটি এমন হারে অভিযোজিত হতে শুরু করে যা তাকে সার্স-কোভ-- উন্নীত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। আমি মনে করি এটা বেশ স্বতন্ত্র একটি সম্ভাবনা।

আরএটিজি১৩-এর নমুনার উৎসকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অধীনে রাখা হয়েছে, যার একটি ২০১৩ সালে চীনা তামা খনিতে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন . শির দীর্ঘকালীন এক সহকর্মী। এটি মূলত বাদুড়ের মলমূত্র পরিষ্কার করতে দেয়া তিন ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে গুহার মাঝে থাকা ফাঙ্গাসকে দায়ী করা হয়। এরপর চারজনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে জানা যায়, তাদের সবার শরীরে অজানা সার্স করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

২০১৬ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল, যার নাম ছিল একটি পরিত্যক্ত মাইনশিফটে বাদুড়ের কয়েকটি কলোনিতে একাধিক করোনাভাইরাসের সহাবস্থান। শি এবং তার সহকর্মীরা লিখেছিলেন যে তারা খনিতে পাওয়া করোনাভাইরাসের ১৫২টি জেনেটিক সিকোয়েন্স করেছেন, যেখানে দুটি ছিল সার্সের জন্য দায়ী ভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। একটিকে বলা হচ্ছিল, সার্সের নতুন স্ট্রেইন হিসেবে এবং ডাকা হচ্ছিল আরএবিটিকোভ/৪৯৯১ নামে।

ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসজাক, যিনি কিনা . শির দলের সঙ্গে ১৫ বছর ধরে ভাইরাস শনাক্তের কাজ করে আসছেন বলেছেন, খনিতে পাওয়া নমুনা আরএবিটিকোভ/৪৯৯১ -এর নাম পরিবর্তন করে আরটিজি১৩ করা হয়েছে। তিনি আরো যোগ করে বলেন, এটি ১৬ হাজার নমুনার একটি মাত্র।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন