নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে চলেছেন। প্রতিদিন তারা নিত্যনতুন তথ্য তুলে ধরছেন। সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণার ফলাফল ভাইরাসটি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাচ্ছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে স্নায়বিক লক্ষণ
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার লক্ষণগুলোর পরিবর্তে স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। জ্যামা নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এ সমীক্ষায় কভিড-১৯ আক্রান্ত চারজন শিশুর স্নায়বিক লক্ষণের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছিল। চারটি শিশুকেই কভিড-১৯ পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোমের চিকিৎসার জন্য নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তির প্রয়োজন হয়েছিল। তাদের স্নায়বিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ছিল এনসেফ্যালোপ্যাথি, মাথাব্যথা, পেশির দুর্বলতা ও চেতনা হ্রাস। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলো না থাকলেও কভিড-১৯ নির্ণয়ে এ জাতীয় স্নায়বিক লক্ষণগুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত।
মস্তিষ্কের কোষকে নিয়ে শঙ্কা
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অর্গানয়েডস বা ‘মিনি-ব্রেইন’—মানব কোষ থেকে কালচার করে তৈরি ক্ষুদ্র টিস্যু—কভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই মনে করেন, ভাইরাসটি মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকেও সংক্রমিত করতে পারে।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর মধ্যে স্নায়বিক লক্ষণগুলো দেখা যায়। তবে ভাইরাসটি মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সংক্রমিত করে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়।
সরাসরি হূিপণ্ডের কোষে সংক্রমণ
ল্যাবরেটরিতে দেখা গেছে, কভিড-১৯ হূিপণ্ডের কোষকে সংক্রমিত করতে পারে। সমীক্ষাটিতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, ভাইরাসটি রোগীদের হার্টের কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে সক্ষম হতে পারে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত অনেক রোগী হূদযন্ত্রের সমস্যা অনুভব করে। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল এটা হূিপণ্ডের অবস্থা, প্রদাহ ও অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে ঘটে, যদিও এর সবগুলোই সংক্রমণের ফলেই ঘটে।
সেল রিপোর্টস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এ সমীক্ষায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে, কভিড-১৯ ভাইরাস সরাসরি হার্টের পৃথক পেশি কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে পারে। ভাইরাসটি হূিপণ্ডের পেশি কোষের মধ্যে দ্রুত বিভক্ত হতে পারে, ফলে সংক্রমণের ৭২ ঘণ্টা পর তাদের পীড়া দেয়ার ক্ষমতা পরিবর্তন হয়।
প্রতিরূপে বাধা দেয়া নতুন অণু
বিজ্ঞানীরা এমন কিছু অণু শনাক্ত করেছেন, যা সংক্রমিত মানব কোষের ভেতরে ভাইরাসটির জিনোম প্রতিলিপি তৈরি করতে সহায়তা করা পলিমারেজ প্রতিক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এই পলিমারেজ প্রতিক্রিয়া বন্ধ করা গেলে করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি থামানো যাবে। আর এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহজেই ভাইরাসটিকে নির্মূল করতে পারবে।
অ্যান্টিভাইরাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় চিহ্নিত এ অণুগুলোর মধ্যে পাঁচটি এরই মধ্যে এইচআইভি এইডস, সাইটোমেগালোভাইরাস এবং হেপাটাইটিস বিসহ অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হয়েছে। গবেষকরা আশা করেন, তাদের এ ফলাফলগুলো কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন ওষুধের নকশা ও সংশ্লেষণে সহায়তা করতে পারে।
দ্য প্রিন্ট