অর্থ সংকটে বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প

শামীম রাহমান

নিরাপদ, দ্রুত, পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গাজীপুর থেকে ঢাকা বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে  বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের সময় এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল হাজার ৩৯ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে হাজার ২৬৮ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে হাজার ৪২৫ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং বাকি হাজার ৮৪২ কোটি টাকা বিদেশী সহায়তা থেকে আসার কথা। তবে অর্থায়নকারী তিন সংস্থার কাছ থেকে বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্যের বাকি হাজার ৩১৬ কোটি টাকার এখনো সংস্থান করতে পারেনি সরকার।

এরই মধ্যে প্রকল্পের সাহায্যের বাকি টাকার সংস্থান করার জন্য সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘অতিরিক্ত হাজার ৩১৬ কোটি টাকার সংস্থান না হলে তা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করার প্রয়োজন হবে।

শুরুতে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সে সময় বিআরটির জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল হাজার ৩৯ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় ব্যয় না বাড়িয়ে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির মেয়াদ নিয়ে যাওয়া হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজস্ব ব্যয়, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়, নতুন কয়েকটি কাজের অঙ্গ যুক্ত হওয়া এবং কিছু অঙ্গের কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয় প্রকল্পটির ব্যয়। বর্তমানে হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যত টাকা খরচ হবে, তার ৩৪ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। হিসাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ডিপিপিতে বাকি হাজার ৮৪২ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে সংস্থান করার কথা বলা হয়েছে।

ডিপিপি অনুযায়ী, তিনটি সংস্থা বিআরটি প্রকল্পে অর্থায়ন করার কথা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) হাজার ২৩৫ কোটি টাকা ঋণ, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ৩৭৭ কোটি টাকা ঋণ এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দেয়ার কথা। তবে প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, তিন সংস্থার কাছ থেকে হাজার ৬৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হলেও তারা হাজার ৫২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রথম যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল, তখন বিদেশী সহায়তা ধরা হয়েছিল হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, যার পুরোটা না হলেও এর সিংহভাগই তিন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণ করা হলেও বিদেশী অর্থায়ন এখন পর্যন্ত বাড়াতে পারেনি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ।

এরই মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল পেরিয়ে গেছে আট বছর। বাস্তবায়নের জন্য মাত্র দেড় বছরের মতো সময় থাকলেও বিআরটির প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩২ দশমিক শতাংশ (মে মাস পর্যন্ত)

দেশের প্রথম বিআরটি প্রকল্পে শুধু যে বৈদেশিক সহায়তা খাতে অর্থ সংকট তৈরি হয়েছে তা নয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রকল্পের ঠিকাদাররাও নির্মাণকাজে যথাযথভাবে অর্থ বিনিয়োগ করছেন না। প্রকল্পের নম্বর প্যাকেজের আওতায় ১৬ কিলোমিটার বিআরটি লেন ১৯টি স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনা গেঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) গত জুনে প্যাকেজটির নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ এগিয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে আইএমইডি মনে করছে, ঠিকাদার নির্মাণকাজে পর্যাপ্ত অর্থপ্রবাহ রাখেনি। যদিও ঠিকাদারকে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা প্রদান করেছে মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পের অন্য প্যাকেজগুলোও রয়েছে একই অবস্থায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের (গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট) পরিচালক এবং সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী চন্দন কুমার বসাক বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের অর্থায়ন বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) দেখভাল করছে। তবে এখন পর্যন্ত অর্থায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

এখনো বিদেশী অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ টাকার সংস্থান বাকি। সেটা সংস্থানের কার্যক্রম কতদূর, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ইআরডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে চন্দন কুমার বসাক বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সার্বিক কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। শ্রমিক, প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি নির্মাণকাজের স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন