ট্রায়াল ও গবেষণার পর্যায়ে থাকা কভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুমোদনের জন্য কিছু গাইডলাইন জানিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ-ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। এতে বলা হয়েছে, অনুমোদন পেতে হলে কোনো ভ্যাকসিনের রোগ প্রতিরোধ কিংবা রোগের মাত্রা কমানোর ৫০ শতাংশ কার্যক্ষমতা থাকতে হবে।
গত ৩০ জুন সিনেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম ও পেনশন কমিটির সঙ্গে বৈঠকের সময় ভ্যাকসিন নিয়ে এ গাইডলাইন প্রকাশ করে এফডিএ।
সেখানে এফডিএ কমিশনার স্টিফেন হান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সিনেটররা বলেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা যতই ত্বরান্বিত হোক না কেন, পণ্যের মান নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।
ব্রিফিংয়ে হান বলেন, ‘আমি চাই, আমেরিকান মানুষ আমার কথাটি শুনবে—আমরা ওই সব ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞান ও তথ্য কাজে লাগাব এবং নিরাপত্তা ও কার্যক্ষমতার দিক থেকে ভ্যাকসিনের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চাইব।’
নিউইয়র্ক টাইমসের সূত্রমতে, বিশ্বে ১৪৫টি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে।
এর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি মডার্না চলতি মাসে তৃতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে।
রয়টার্স এক খবরে জানায়, আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে গবেষণার কাজকে গতি দিতে ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’
নামের সরকারি কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু ইতিহাস বলছে, অধিকাংশ ভ্যাকসিনই পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছে।
এফডিএর প্রতিবেদনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে।
মায়ো ভ্যাকসিন রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক গ্রেগরি পোল্যান্ড রয়টার্সকে বলেন, কার্যক্ষমতা নিয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে তা অন্য ভ্যাকসিনের সঙ্গে তুলনা করলে আদর্শই।
তার কথায়, ‘এটা ঠিক অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের গাইডলাইনের মতোই।
আমি মনে করি না এটা কোনো বড় বাধা হবে।
আমার মনে হয়, ফার্স্ট জেনারেশন কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য এটা বেশ ছোট বাধাই।’ ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বছরের নিয়মিত ফ্লু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে।
বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ পিটার হোটেজ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘৫০ শতাংশ সীমা খুবই কম হয়ে যায় এবং এ দিয়ে এফডিএ স্বীকার করে নিচ্ছে যে আমাদের ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিনটা সর্বোচ্চ মানের হচ্ছে না।’ পরিশেষে তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারকদের ৭০-৭৫ শতাংশ কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত।
ভিন্নমতও আছে।
এফডিএর সাবেক কমিশনার স্টিফেন অস্ট্রোফ বলছেন, ‘৫০ শতাংশ কার্যক্ষমতার সীমা খুব উচ্চ হয়ে যায়।
ভাইরাসটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বহু অঞ্চলে প্রচণ্ডভাবে ছোটাছুটি করছে, সেই আলোকে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা ৫০ শতাংশের কমই হবে।’
৩০ জুনের ব্রিফিংয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন ফাউসি।
অনেক আমেরিকানই ভ্যাকসিন ব্যবহারে অনিচ্ছুক।
দ্য হিল রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর মাত্র ৪৫ শতাংশ আমেরিকান ফ্লুর ভ্যাকসিন নেয়।
ফাউসি মনে করেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখতে অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে।
এরই মধ্যে মানুষকে সচেতন করতে কাজও শুরু করেছে সরকার।
ফাউসি বলেন, ‘এটাই বাস্তবতা।
কর্তৃপক্ষ, সরকার ও ভ্যাকসিনের প্রতি অনেক মানুষের বিশ্বাসের অভাব খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আমাদের সব ধরনের মানুষকে যুক্ত করতে হবে এবং বিশেষ করে সেই সব মানুষকে, যাদের প্রতি সরকার সবসময় ন্যায়বিচার করেনি—সংখ্যালঘু জনগণ, আফ্রো-আমেরিকান, লাতিন আমেরিকান ও আদিবাসী।’
দ্য সায়েন্টিস্ট