স্থায়ী পশুর হাটে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, অস্থায়ী হাট নিয়ে শঙ্কায় গোয়েন্দারা

নিহাল হাসনাইন

ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলীতে রয়েছে একটি স্থায়ী গবাদি পশুর হাট। স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর হাটে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সম্ভব হয় না সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। দেশজুড়ে ধরনের স্থায়ী হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত রেখেই বসছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। এতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছেএমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, ঢাকার গাবতলী, সারুলিয়া, আশুলিয়া, গাজীপুর শ্রীপুরের মাওনা, কাপাশিয়া, কুমিল্লার চান্দিনা, নোয়াখালীর রামগঞ্জ, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নেত্রকোনার সিধলী, ঝিনাইদহের ভাটই বাজার, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়ার ভাদালিয়া, সাতক্ষীরার দেবহাটার পারুলিয়া, খুলনার ডুমুরিয়ার খর্নিয়া, বগুডার দুপচাঁচিয়ার ধাপেরহাট রাজশাহীর পুঠিয়াসহ দেশের যেসব স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ২৪-২৫টি পশুর হাট বসে। এবার ঢাকা দক্ষিণে ১৪ উত্তরে ১০টি পশুর হাট বসানোর জন্য সিটি করপোরেশন তালিকা চূড়ান্ত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় এত পশুর হাট বসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার ভেতরে শাজাহানপুর আরমানিটোলায় অস্থায়ী পশুর হাট বসে প্রতি বছরই। বর্তমানে এলাকা দুটি করোনার রেড জোনের আওতায় রয়েছে। এছাড়া আরমানিটোলা হাটের অদূরে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত মহানগর হাসপাতালের অবস্থান। এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় পশুর হাট বসলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ--মাহবুব বণিক বার্তাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গণপরিবহন খুলে দেয়া হলো, চালু হলো শিল্প-কারখানা এবং বাজারঘাট। কিন্তু এর পরই আমরা লক্ষ করছি সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা আসবেন। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা না হলে অস্থায়ী পশুর হাট থেকেই সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, করোনার ঝুঁকি এড়াতে গাবতলী সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাট ছাড়া বাকি হাটগুলো, পূর্বাচল (রাজউক প্রকল্প এলাকা), টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দান, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প এলাকা, রাজউক ঝিলমিল প্রকল্প এলাকা (কেরানীগঞ্জ) পূর্বাচল ৩০০ ফুট এলাকায় আফতাব নগরের পূর্ব সীমানায় খোলা স্থানসহ শহরতলির অন্যান্য উপযুক্ত স্থানে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

একই ভাবে দেশের বিভাগীয়, জেলা উপজেলা শহরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাপ্তাহিক হাট হিসেবে না রেখে প্রতিদিন হাট বসানোর মাধ্যমে নতুন অস্থায়ী হাট নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে। এসব হাটকে ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে প্রতিদিন চালু রাখা সম্ভব হলে পশুর কেনাবেচার স্থান সংকুলান সম্ভব হবে।

এছাড়া হাটে প্রবেশের সময় ক্রেতা-বিক্রেতার শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা, সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌতকরণ মাস্ক পরিধান, পশুবাহী যানবাহন যথাযথভাবে জীবাণুমুক্তকরণ, হাট এলাকায় নিয়মিত বিরতিতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দূষণমুক্ত রাখা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার অনুমোদিত হাটে আমাদের প্রযুক্তিগত পুলিশি ব্যবস্থা, স্ট্যাটিক ডেপ্লয়মেন্ট, পরিস্থিতি বুঝে ভার্চুয়াল ডেপ্লয়মেন্ট, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ বহুমাত্রিক পুলিশি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। থাকবে কুইক রেসপন্স টিমসহ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ। হাটকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যবিধি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়েও কাজ করবে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন