আগামী পাঁচ বছরে কৃষিজাত খাদ্যপণ্য খাতে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ সময়ে কভিড-১৯-এর আপত্কালীন ধকল সামলে এ শিল্পে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ খাতের জন্য ‘এগ্রো ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন পলিসি-২০২০’ শীর্ষক নীতিমালাতে এসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার খসড়া শিগগিরই চূড়ান্ত হচ্ছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এ নীতিমালায় চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত কৃষিখাদ্যের বাজারে সমগ্র এশিয়ায় শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। সেক্ষেত্রে এ শিল্পের বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা উন্নয়ন, প্রযুক্তি বিনিময়, উন্নত ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাংলাদেশকে আঞ্চলিক খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ হাব হিসেবে গড়ে তোলার এ পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে জিডিপির অবদান ২ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া দেশীয় ও বৈশ্বিক বাজারে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রতি বিভাগে অন্তত একটি করে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা উন্নয়নের প্রকল্প নেয়া হবে।
এ নীতিমালার অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকালে অপচয় রোধকল্পে শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, পণ্যের গবেষণা ও উন্নয়নে মনোনিবেশ, আকর্ষণীয় ও টেকসই প্যাকেজিং। এদিকে এ শিল্পের অবকাঠামোগত সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেয়ার বিষয়টিও এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া পণ্যের বিভিন্ন ক্লাস্টার নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আলোকে সরকার এবং শিল্প মালিকদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা। এ খাতের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার নীতিমালা করলে তা খাতের জন্য ইতিবাচকই হবে। কারণ আমরা চাই ভেজাল বন্ধ হোক। আমাদের সন্তানদের যে খাদ্য খাওয়াতে পারব না, তা অন্য কারো জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে না। পাশাপাশি আমাদের পরামর্শ থাকবে, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে, তাতে আমাদের জন্য কাজটা সহজ হবে। এ সময় সম্ভাবনাময় এ শিল্পের জন্য সরকারি নীতি সহায়তা বৃদ্ধি পেলে রফতানিতে গতিশীলতা আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
নীতিমালাটি বাস্তবায়নের সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ফল ও সবজি জাতীয় পণ্যের গ্রেডিং প্যাকেজিং করা, খাদ্যশস্য কল-কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের স্থিতিশীল বাজার, পোলট্রি, ডিম, মাংস ও মাংসজাত এবং মাত্স্য পণ্য প্রক্রিয়াকরণ।
নীতিমালা বাস্তবায়নে বেশকিছু বিষয় নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ফ্রিজিং ট্রান্সপোর্ট ও কোল্ড স্টোরেজের যথাযথ ব্যবহার, ফল জাতীয় পণ্যের জুস তৈরি, পাউরুটি ও বিস্কুট জাতীয় পণ্যের বাজার, টিস্যু কালচার ল্যাব, গ্রিন হাউজ নার্সারি উন্নয়ন।
প্রক্রিয়াজাত কৃষিখাদ্যের দেশীয় ও বৈশ্বিক বিশেষ করে রফতানিমুখী বাজার সম্প্রসারণের জন্য নিরাপদ এবং মানসম্মত পণ্যের দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। সঙ্গে ‘হালাল ব্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাপ্লাই চেইনের ওপর দৃষ্টি রাখার কথা বলা হচ্ছে।
নীতিমালায় খাদ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় গুণগতমানের দিকে বিশেষ নজর দিতে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তার বিশ্বমানের ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারটি উল্লেখ আছে।
এসব ক্ষেত্রে শিল্পের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ আয়োজনে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা হবে। যাতে আগামী পাঁচ বছরে এ শিল্পে এক লাখ দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। নীতিমালাটি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পে আলোর মুখ দেখতে একটি ন্যাশনাল স্ট্রিয়ারিং কমিটি ও কয়েকটি ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নীতিমালার পঞ্চম খসড়ার ওপর বর্তমানে মতামত নেয়া হচ্ছে। এর পরই এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। যেখানে বহুমুখী প্রক্রিয়াজাত কৃষিখাদ্যের দেশীয় ও বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি ‘হালাল ব্র্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ জোরদার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিম উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসতে নীতিমালাটি করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সভা ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর সভায় সবার সিদ্ধান্তক্রমে এটা চূড়ান্ত হবে। পুরো বিষয়টি সভার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করলেও এ বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে বলে জানান তিনি।