ব্রাজিলে দুরবস্থায় দেড় হাজার বাংলাদেশী কাপড় ব্যবসায়ী

আবু তাহের

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগ থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে কাপড়ের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন অন্তত দেড় হাজার বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। করোনার প্রাদুর্ভাবে আয়-উপার্জনে মারাত্মক ধস নামায় বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন তারা।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষের। লকডাউনের কারণে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে দিনের পর দিন। আবার খোলা থাকলেও তা একেবারেই সীমিত আকারে। এতে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গিয়েছেন সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ব্রাজিলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রাজিলে সব মিলিয়ে দেড় হাজার বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাপড়ের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছেন তারা। বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে পড়ার পাশাপাশি দোকান বাড়িভাড়া এমনকি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা নিয়েও মারাত্মক দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছেন তারা।

এমনই একজন বাংলাদেশী কাপড় ব্যবসায়ী হাসনাত। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় ব্যবসা করেন তিনি। প্রতি মাসে দোকানভাড়া, বাড়িভাড়া কর্মচারীদের বেতন বাবদ লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় তাকে। কিন্তু গত তিন মাসে ব্যবসা না চললেও নিয়মিতভাবে এসব ব্যয় পরিশোধ করতে হয়েছে তাকে। দোকান বা বাসার মালিককারো সঙ্গেই ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে কোনোভাবেই সমঝোতায় যেতে পারছেন না তিনি। বিষয়টি সুরাহার কোনো উপায়ও জানা নেই তার। করোনায় ব্রাজিলে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি ভাষাগত জটিলতা থাকায় আইনের আশ্রয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই তার।

ব্রাজিলের আরেক শহর সাও পাওলোয় ব্যবসা করছেন জয়নুল হক। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সেখানে এখন নানাবিধ আইন-কানুন জারি রয়েছে। ফলে দোকানপাটও প্রায়ই বন্ধ থাকে। দিনের যেটুকু সময় খোলা থাকে (ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা), তাতে ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন।

তার ভাষায়, আমরা যারা হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ব্রাজিলে এসে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছি, তারা এখানে আর থাকতে পারব কিনা, সে বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। অবস্থা চলতে থাকলে বাঁচব কি মরব জানি না।

করোনার কারণে জীবন-জীবিকায় দুর্দশা নেমে আসার কথা জানালেন রিও ডি জেনিরোর কাপড়ের ব্যবসায়ী মুস্তফা, রবীন প্রমুখও।

তবে দেশটির বিভিন্ন বড় কোম্পানি বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বাংলাদেশীরা এখন তুলনামূলক ভালো আছেন। ব্রাসিলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা জানান, সেখানে বড় কোম্পানি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশীরা নিয়মিত বেতন পাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন। কিন্তু যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট-সুপার শপ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত, অর্থসংকটে ভুগছেন তারা। বিক্রি না থাকায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

তবে ব্রাজিলে প্রবাসী বাংলাদেশী চাকরিজীবীরাও একেবারে দুশ্চিন্তামুক্ত রয়েছেন, বিষয়টি তা- নয়। মহামারীজনিত অর্থনৈতিক অভিঘাতে ছাঁটাই হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারাও।

ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, ব্রাজিলে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজারের মতো বাংলাদেশী রয়েছেন। এর মধ্যে ব্রাসিলিয়ায় বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত রয়েছেন প্রায় এক হাজার। দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে ব্রাজিলে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন। সংসারও পাতিয়েছেন অনেকে।

করোনা পরিস্থিতিতে ব্রাজিলে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অবস্থা জানতে কথা হয় সেখানে পরিচালনাধীন এনজিও আফ্রিকা দা করাসাওয়ের বাংলাদেশী পরিচালক এএইচএম খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, করোনায় বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশ অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। অনিশ্চয়তার প্রধান কারণ বাড়িভাড়া দোকানভাড়া, যেটা তারা সংকটের সময়ে কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে এসব সমস্যার সমাধান কোথায়, সে বিষয়েও তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই।

বিষয়টি নিয়ে ব্রাজিলের বাংলাদেশী দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে মহামারীকালে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন