উত্তরাঞ্চলে বন্যা

পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল ধরলা ছাড়া বাকি সব নদ-নদীর পানিই কমেছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। দীর্ঘ এক সপ্তাহ পানিবন্দি থাকায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে, অধিকাংশ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কুড়িগ্রাম: জেলায় ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপত্সীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপত্সীমার ৪২ সেন্টিমিটার নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, মূলত উজানের এবং স্থানীয় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ধরলার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আর ভারি বৃষ্টিপাত না হলে ধরলার পানি তেমনটা বৃদ্ধি পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ধরলার পানি বিপত্সীমার ওপর থাকা অবস্থায় তিন-চারদিন পর পানি আবারো বাড়তে পারে। অবস্থায় ধরলা ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চল নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি না নামতেই আবারো পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এদিকে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নদ-নদীর অববাহিকার আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে রয়েছে। বন্যা যদি আরো দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে চরম খাদ্য সংকটে পড়তে হবে বানভাসি মানুষকে।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। তাদের মধ্যে কর্মজীবী পরিবারগুলোর হাতে কোনো কাজ না থাকায় খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার পরিবারের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩০০ পরিবারকে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩০২ টন চাল ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরো ১০০ টন চাল শুকনো খাবারের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

বগুড়া: জেলার সারিয়াকান্দিতে গতকাল বিকালে যমুনার পানি কমে বিপত্সীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত পানি কমেছে সেন্টিমিটার। পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট সোনাতলায় এখনো নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে যত দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, ততটা দ্রুত পানি কমছে না। তবে পর্যন্ত প্রায় সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বিকালে পানি কমে বিপত্সীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ: জেলায় যমুনা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমার ৪৬ এবং কাজিপুর পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সন্ধ্যা ৬টায় পানি আবারো কমতে থাকে। সময় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি কমে বিপত্সীমার ৩৬ এবং কাজীপুর পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, যমুনার পানিতে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পাঁচ উপজেলার প্রায় ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

অপরদিকে, ঘর-বাড়ি ছেড়ে পানিবন্দি মানুষ বিভিন্ন বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন।

জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ২১৬টি গ্রামের ৩৪ হাজার ৬৮৪টি পরিবারের লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৩০টি শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার ৬০টি ঘর-বাড়ি এবং পানি বৃদ্ধির কারণে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা বাঁধ তলিয়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন