চীন কর্তৃক সূদুরপ্রসারী ও বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন পাস করায় হংকং ছেড়েছেন অন্যতম শীর্ষ তরুণ গণতন্ত্র কর্মী নাথান ল। এক সময়কার ছাত্রনেতা নাথান ল স্থানীয় সংসদ সদস্যও। ২০১৪ সালের ‘আমব্রেলা প্রটেস্ট’ এর পর তিনি জেল খাটেন। চলমান আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। তবে এখনকার পরিস্থিতিতে তিনি দেশ ছাড়তে ‘বাধ্য হয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন। যদিও বিদেশে থেকেই তিনি আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দিয়ে যাবেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আন্দোলন এখনো বেশ জীবন্তই রয়েছে।’ আইন ভঙ্গ করে আন্দোলনে নামলে আজীবন কারাবাসের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও হংকংয়ের মানুষ এটি ছাড়বে না বলে জানান নাথান।
অভিযোগ উঠেছে, নতুন নিরাপত্তা আইন পাসে হংকংয়ের নাগরিকরা আর পূর্বের ন্যায় স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে না। যদিও বেইজিং এমন সমালোচনা উড়িয়ে দিচ্ছে।
১৯৯৭ সালে হংকংয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা চীনের হাতে তুলে দেয় ব্রিটিশ সরকার। তখন ‘এক দেশ, দুই নীতি’ চুক্তিটা পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য হংকংয়ের নাগরিকদের বিশেষ অধিকারের সুরক্ষা দেয়। যদিও মাত্র ২৩ বছর পরই চীন এ চুক্তির শর্ত ভাঙল।
আন্দোলন, ধ্বংসযজ্ঞ কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য সর্বোচ্চ আজীবন কারাবাসের শাস্তি রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই আইনটি কার্যত হংকংবাসীর কথা বলার অধিকারটা কেড়ে নিল।
মঙ্গলবার আইন পাসের ঘোষণা আসার পরপরই নাথান ল ডেমোসিস্টো পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যে পার্টির তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অধিকার আদায়ের আন্দোলনের খ্যাতিমান নেতা জসুয়া ওয়াংকে নিয়ে পার্টি গঠন করেছিলেন নাথান। এখন সরে দাঁড়ালেও তিনি বলেছেন, এই আইনটি ‘রক্তাক্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লবে’র সূচনা করল।
বুধবার হংকং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় শুনানিতে ‘ভিডিওলিংক’ এর মাধ্যমে আমেরিকান রাজনীতিকদের নাথান ল বলেন, বেইজিং তাকে জেলে পাঠাতে পারে, এই ভয়ে তিনি জন্মভূমিতে ফিরছেন না। তিনি বলেন, ‘হংকংবাসীকে যে নিছক অঙ্গিকার দেয়া হয়েছিল, এই আইন তো তার বিরুদ্ধেই যায়। আমার ভালোবাসার শহরটি এখন অনেক কিছু হারিয়েছে: সত্য বলার স্বাধীনতাটুকুও শেষ।’
চীন এখন এই অঞ্চলে আরো বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। নাথান তাই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, গোপন পুলিশ এখন সত্যিকারের আতঙ্ক হয়ে উঠবে।’
চীন সত্যি সত্যিই বেশ হার্ডলাইনে যাচ্ছে। তাইতো বিক্ষোভ, আন্দোলন দমাতে অভিজ্ঞ ঝেং ইয়ানজিয়ংকে হংকংয়ের নতুন সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান করে পাঠিয়েছে চীন। দক্ষিণ চীনের গ্রাম উকানের একটি আন্দোলন সফলভাবে দমন করে তিনি খ্যাতি পান। হংকং নিয়ে নতুন আইন পাস করায় এখন এ অঞ্চলে কঠোর আইন বলবৎ করবে চীন। আর হংকংয়ের সিকিউরিটি এজেন্সি সরাসরি বেইজিংকে জবাবদিহি করবে।
এদিকে কঠোর নিরাপত্তা আইন বলবৎ হলে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের স্বাধীনতা অনেক কমে যাবে হংকংবাসীর। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সাইটে কঠোর নজরদারি থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডাররা তাদের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লেনতো ইপ-ইউক-ফাই বলেন, ‘অতীতে ইন্টারনেট প্রভাইডারদের সহযোগিতা পেতে চাইলে পুলিশকে আগে কোর্টের অনুমতি নিতে হতো। আগে যারা কোর্টের অনুমতির বিষয়টি জানতো না তারা হয়তো পুলিশকে সহযোগিতা করত। কিন্তু এখন তো নিরাপত্তা বাহিনী কোর্টের অনুমতি ছাড়াই আমাদের কাউকে ফোন করে তথ্য চাইছে। নতুন আইনের পর পুলিশ বাড়তি ক্ষমতা পাচ্ছে যার ফলে তারা সরাসরি আমাদের সাহায্য চাইতে পারবে এবং আমরাও এটি দিতে বাধ্য থাকব এবং এ নিয়ে আপত্তি করা যাবে না।’
সূত্র: বিবিসি ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট