নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে জ্বালানি পণ্যের বাজার।
অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের মতো কয়লা বাজারেও এর প্রভাব বিদ্যমান।
পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় ধস নেমেছে।
এতে পণ্যটির শীর্ষ উত্তোলনকারী দেশগুলোর লোকসানের বোঝা ক্রমেই ভারী হয়ে উঠছে।
প্রায় সব দেশেই পণ্যটির উত্তোলন কমেছে।
একই অবস্থা বিদ্যমান ইন্দোনেশিয়ায়ও।
এরই মধ্যে দেশটিতে পণ্যটির উত্তোলন ৮ শতাংশ কমেছে।
তবে সম্প্রতি চলতি বছর কয়লা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
এ সময় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করছে দেশটি।
খবর আরগুস মিডিয়া ও ইকোনমিক টাইমস।
ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছর দেশটি তার ৫৫ কোটি টন কয়লা উত্তোলন লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি রয়েছে।
এছাড়া এ সময় জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বেড়ে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশা করছে দেশটি।
এর আগে এবার সব মিলিয়ে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টন কয়লা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল দেশটি।
অর্থাৎ সম্প্রতি ২০২০ সালে পণ্যটির রফতানি লক্ষ্যমাত্রা আরো চার লাখ টন বাড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
যদিও পণ্যটির উত্তোলন ও রফতানি আগের বছরের তুলনায় নিম্নমুখী থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ।
দেশটি থেকে রফতানি হওয়া কয়লার সিংহভাগ থাকে তাপ কয়লার দখলে।
দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান এজেন্সি বিপিএসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার খনিগুলো থেকে মোট ৬১ কোটি ৬০ লাখ টন কয়লা উত্তোলিত হয়েছে।
এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ৪৫ কোটি ৬৪ লাখ টন কয়লা রফতানি করেছিল দেশটি, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি ছিল।
এর মধ্যে তাপ কয়লা রফতানি হয় ৪২ কোটি ৮৮ লাখ টন।
মূলত চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) কয়লা উত্তোলন প্রবৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে ইন্দোনেশিয়া সরকার সম্প্রতি একটি পূর্বাভাস দিয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে দেশটিতে প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুতগতিতে কয়লা উত্তোলন বাড়ছে।
এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে মোট ২২ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা উত্তেলন করা হয়েছে, যা মোট উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রার ৪১ শতাংশ।
তবে ইন্দোনেশিয়ার এ লক্ষ্যমাত্রা এটাও প্রমাণ করে যে চলতি বছরের বাকি সাত মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে মাসভিত্তিক গড়ে ৬৫ লাখ টন ও সম্মিলিতভাবে মোট ৪ কোটি ৫৬ লাখ টন কয়লা উত্তোলন কমে যেতে পারে।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির কয়লা উত্তোলন আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে।
এর মধ্যে এপ্রিলে ও মে মাসে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনে বড় পতন দেখা গিয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দেশটির অভ্যন্তরীণ খনিজ কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ও কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনতে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তথ্য মতে, এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়া সব মিলিয়ে ৪ কোটি ২৯ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কম এবং মে মাসে এসে দেশটিতে জ্বালানিটির উত্তোলন আরো কমে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টনে নেমেছে, আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৩০ শতাংশ কম।
কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের জেরে এ বছর ইন্দোনেশিয়ার অভ্যন্তরীণ কয়লা ব্যবহারে তীব্র পতন দেখা দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো উদীয়মান বাজারগুলোতে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাড়াতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
আর এর জের ধরেই সম্প্রতি চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির রফতানি লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে দেশটি।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা খনি অ্যাসোসিয়েশন এপিবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশটিতে কয়লার অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে ১০ কোটি টনে নামতে পারে।
২০১৯ সালে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ টন।