নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সারা বিশ্বের নাকাল অবস্থা।
এর মধ্যেই নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে পঙ্গপালের ঝাঁক।
আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ কালো করে সম্প্রতি ফসলখেকো পতঙ্গটি দক্ষিণ আমেরিকার ঘুম হারাম করছে।
সম্প্রতি প্যারাগুয়েতে তাণ্ডব চালিয়েছে পঙ্গপাল।
আর্জেন্টিনার কিছু অঞ্চলেও এদের দেখা মিলেছে।
ব্রাজিলে আক্রমণের আশঙ্কা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে।
এরই মধ্যে ব্রাজিলের দুটি রাজ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখানো হয়েছে।
এ অঞ্চলের দেশগুলো কৃষি খাতে যথেষ্ট সমৃদ্ধ।
ফলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় পঙ্গপালের ব্যাপক আক্রমণ হলে তা পুরো বৈশ্বিক কৃষি শৃঙ্খলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে আর্জেন্টিনার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে দৃশ্যমান রয়েছে পঙ্গপালের ঝাঁক।
এদের গতিবিধির সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল।
যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত দাবি করছেন, পঙ্গপাল দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর কৃষি খাতের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
আর্জেন্টিনার জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি সার্ভিস (এসইএনএএসএ) সম্প্রতি জানিয়েছে, গত মে মাসে প্যারাগুয়েতে আক্রমণ চালিয়েছে পঙ্গপাল।
দেশটির ভুট্টা খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে এরা।
এরপর মে মাসের শেষদিকে প্যারাগুয়ে থেকে আর্জেন্টিনার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ঢুকে পড়ে বিধ্বংসী পতঙ্গের দল।
এ ঝাঁকটিতে প্রায় ৪ কোটি পতঙ্গ রয়েছে।
বর্তমানে ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের সীমান্তবর্তী শহর কোরিয়েন্টেসে অবস্থান করছে ঝাঁকটি।
বৈশ্বিক কৃষি খাতে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।
ভুট্টা উৎপাদনের বৈশ্বিক তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয় এবং আর্জেন্টিনা পঞ্চম।
খাদ্যপণ্যটির রফতানিতে দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
সয়াবিন উৎপাদন ও রফতানিতে ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ দেশ।
পণ্যটি উৎপাদন ও রফতানিতে আর্জেন্টিনার অবস্থান তৃতীয়।
এর বাইরে তুলা রফতানিতে দ্বিতীয় ও কফি রফতানিতে প্রথম দেশ ব্রাজিল।
এছাড়া গম, চাল, কোকো উৎপাদনেও দেশটি প্রসিদ্ধ।
অন্যদিকে সূর্যমুখী তেলবিজ রফতানিকারী দেশের তালিকায় আর্জেন্টিনা তৃতীয় শীর্ষস্থানীয়।
এছাড়া দেশটিতে প্রচুর গম, চা ও বাদাম উৎপাদন হয়।
ফলে পঙ্গপাল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কৃষি খাতে আঘাত হানলে তা পুরো বৈশ্বিক কৃষি সরবরাহ শৃঙ্খলে আঘাত হানতে পারে।
এসব পণ্যের সরবরাহ সংকটে দাম তুঙ্গে উঠতে পারে।
এসইএনএএসএর সমন্বয়কারী হেক্টর মেদিনা বলেন, উপদ্রবকারী পোকার ওপর আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
যতদূর অনুমান করতে পারছি, দক্ষিণ দিক থেকে শীতল আবহাওয়া সম্মুখভাগে আগমনের কারণে আগামী দিনে পঙ্গপালের চলাচল এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, নিম্ন তাপমাত্রা পঙ্গপালের চলাচলের গতি ও বংশ বিস্তার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
ফলে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিরা থেকে সরে গিয়ে প্রতিবেশী কোনো দেশে আক্রমণ চালাতে পারে এরা।
বর্তমানে পঙ্গপাল অপেক্ষা প্রতিকূল আবহাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে আর্জেন্টিনা।
দেশটির এসইএনএএসএ ও বুয়েনস এইরেস গ্রেইন এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে এবার মারাত্মক শুষ্ক আবহাওয়া দেখা দিয়েছে, যা বেশির ভাগ শস্য উৎপাদনে মন্দা নামিয়ে আনতে পারে।
বুয়েনস এইরেস গ্রেইন এক্সচেঞ্জের এগ্রিকালচারাল এস্টিমেটেড ডিপার্টমেন্টের প্রধান এস্তেনবান কোপাতি বলেন, আপাতত পঙ্গপাল আর্জেন্টিনার কৃষির জন্য কোনো সমস্যা নয়, বরং আমরা গম রোপণের উপযুক্ত আর্দ্রতা নিয়ে বেশি চিন্তিত।
অন্যদিকে ব্রাজিলও বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না।
ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় আর্জেন্টিনা সীমান্তে অবস্থানরত পঙ্গপালের ঝাঁকটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলেছে।
ব্রাজিলের কৃষিমন্ত্রী তেরেজা ক্রিস্টিনা দিয়াজ দেশটির রিও গ্রান্দে দো সুউল ও সান্তা ক্যাতারিনা প্রদেশ দুটিতে সম্প্রতি ফাইটোস্যানিটারি জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও শিগগিরই দেশটিতে পঙ্গপাল আক্রমণ হবে না বলেই মত দিয়েছেন বেশির ভাগ স্থানীয় বিশ্লেষক।
রয়টার্স, দ্য সান ও ফার্ম পলিসি নিউজ অবলম্বনে