সুনামগঞ্জে বন্যায় ভেসে গেছে ৩ হাজার পুকুরের মাছ

আল আমিন সুনামগঞ্জ

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বানের পানিতে ভেসে গেছে তিন হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ এতে জেলার প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের লোকসান কাটিয়ে ওঠার আগেই বানের জলে এমন ক্ষতিতে দিশেহারা জেলার মৎস্য খামারিরা

জেলা মৎস্য অফিস স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয় তলিয়ে যায় কয়েক শতাধিক গ্রাম এতে ১১ উপজেলার তিন হাজারের বেশি পুকুরের মাছ বানের পানিতে ভেসে যায়

এর মধ্যে সদর উপজেলার হাজার ২১৮টি, ছাতকের ২১০টি, ধর্মপাশায় ৩৪২টি, তাহিরপুরে ৭০টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৪৫০টি, দোয়ারাবাজারে ২৯৩টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৯০টি এবং জামালগঞ্জে ১১১টি, দিরাইয়ে ২৬টিসহ পুরো জেলায় হাজার ৮১টি পুকুর দীঘি বন্যায় তলিয়ে যায়

মৌসুমের ছয় মাস ধান আর বাকি ছয় মাস মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে হাওড়াঞ্চলের মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ আর ধারদেনা করে পুকুরে মাছের চাষ করে অনেকেই কিন্তু বন্যার পানিতে সব তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এসব মৎস্যচাষীরা

জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর উপজেলার খামারিরা সেখানকার ইব্রাহিমপুর মডার্ন এগ্রো কমপ্লেক্সে লিমিটেড নামে এক খামারি ব্যাংক থেকে কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নয়টি পুকুরে মাছ চাষ করেন কিন্তু হঠাৎ বন্যায় নয়টি পুকুরে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে

একই অবস্থা বাকি মৎস্য খামারিদের করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার আগেই বানের জলে এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হাওড়ের মৎস্য খামারিরা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা

ইব্রাহিমপুর গ্রামের শিহাব মিয়া বলেন, ভারি বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে পুকুরের পানি উপচে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বড় মাছ বেরিয়ে যায় এতে আমার প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে

একই গ্রামের মিজান মিয়া জানান, তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে

মাছচাষী কবির মিয়ার পাঁচটি পুকুর রয়েছে বন্যার পানি উপচে উঠে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা মাছ বেরিয়ে গেছে এতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে

সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর মডার্ন এগ্রো কমপ্লেক্সে লিমিটেডের পরিচালক ইসলাম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নয়টি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি নয়টি পুকুরে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মাছ চাষ করেন এবং ৩০-৩৫ লাখ টাকার খাবার দিয়ে মাছ বড় করতে হয় মাছ বিক্রি করতে পারলে দেড়-দুই কোটি টাকা আসত কিন্তু মহামারী করোনার কারণে তিন-চার মাস ধরে মাছ বাজারে বিক্রি করতে পারিনি হঠাৎ বন্যা এসে সব পুকুরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায় এখন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে সেই চিন্তায় আছি

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, জেলায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি খামারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষীদের তালিকা তৈরি করছি পর্যন্ত হাজার ৮১টি পুকুরে তালিকা তৈরি করা হয়েছে ক্ষতির হিসাব আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি

খামারিদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর প্রযুক্তি হস্তান্তর করা জন্য বেশি কাজ করে থাকে আমরা তাদের পরামর্শ প্রযুক্তিগত সহায়তা করব, যাতে মাছচাষীরা নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারেন যেহেতু তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য সরকার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে এখান থেকে তারা শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন