২০১৯ সালের শেষ
দিকে সামনে
আসে নভেল
করোনাভাইরাস। কভিড-১৯
নামের এই
রোগটি উত্থানের
পর থেকেই
ডাক্তার ও
গবেষকদের বিস্ময়ের
মাঝে রেখেছে। হিসাব
অনুযায়ী এই
রোগটি এখন
পর্যন্ত ১
কোটির বেশি
মানুষকে আক্রান্ত
করেছে এবং
৫ লাখের
বেশি মানুষের
মৃত্যুর কারণ
হয়েছে। পাশাপাশি এই
মহামারী বৈশ্বিকভাবে
অর্থনীতিকে রীতিমতো
পঙ্গু করে
দিয়েছে। সম্প্রতি সার্স-কোভ-২-এর দুটি
প্রধান বংশের
বিবর্তন এবং
একই সঙ্গে
চীনের সাংহাইয়ের
৩২৬ জন
কভিড-১৯
আক্রান্ত রোগীর
মাঝে এর
তীব্রতা পরীক্ষা
করে দেখা
হয়েছে।
কভিড-১৯-এর
ছড়িয়ে পড়ার
ক্ষেত্রে শুরুর
ভাবনা ছিল
এটি চীনের
উহানের হুয়ানান
প্রদেশের একটি
সি-ফুড
মার্কেটে প্রাণীদেহ
থেকে মানুষের
শরীরে স্থানান্তরিত
হয়। ২০১৯ সালের
ডিসেম্বর মাসের
শেষ দিকে
রোগটি যখন
সামনে আসে
তখন এটিকে
মারাত্মক নিউমোনিয়া
হিসেবেই বিবেচনা
করা হয়েছিল। সে
সময় বেশির
ভাগ কেসই
ছিল সেই
মার্কেটের সঙ্গে
সম্পর্কিত। তখন ধারণা
করা হয়,
মার্কেটে প্রাণী
বেচাকেনার সময়
রোগটি প্রজাতির
বাধা অতিক্রম
করে মানুষকে
সংক্রমিত করে। এর
মাঝে অবশ্য
আরো কিছু
কেস সমানে
আসে, যার
সঙ্গে সেই
মার্কেটের তেমন
কোনো সম্পর্ক
ছিল না।
এরপর ২০২০ সালের
জানুয়ারি অথবা
ফেব্রুয়ারি মাসে
সাংহাইয়ের যেসব
রোগী হেলথ
কেয়ার ক্লিনিকে
চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল
তাদের মাঝে
৯৪ জনের
সার্স-কোভ-২-এর
পূর্ণ জিনোম
সিকোয়েন্স করে
দেখা হয়। পরে
সেই ডাটা
২২১টি অন্য
সিকোয়েন্সের সঙ্গে
তুলনা করে
দেখা হয়। এই
প্রক্রিয়ায় গবেষকরা
যে ফলাফল
পেয়েছেন তা
প্রাদুর্ভাবের শুরুতে
চীনে সার্স-কোভ-২-এর দুটি
প্রধান ফাইলোজেনেটিক
বংশের যে
ধারণা তাকেই
শক্তিশালী করে। তারা
দুটি স্বতন্ত্র
নিউক্লিওটাইড পার্থক্য
দ্বারা পৃথক
হয়। যা দেখায়,
সাংহাইয়ের মানুষের
মাঝে একাধিক
উৎস থেকে
মানব সংক্রমণ
ছড়িয়ে পড়ার
বিষয়টি।
এ দুটি বংশকে
ক্ল্যাডস ১
ও ক্ল্যাডস
২ বলা
হচ্ছে। তারা সম্ভবত
একটি সাধারণ
পূর্বপুরুষ থেকে
স্বাধীনভাবে বিবর্তিত
হয়েছে। যদিও তারা
কীভাবে একে
অন্যের সঙ্গে
সম্পৃক্ত তা
স্পষ্ট নয়। কারণ
তারা কেবল
দুটি জিনোমিক
সাইটে গিয়ে
আলাদা হয়। একটি
পার্থক্য সিকোয়েন্সের
নির্দিষ্ট নিউক্লিওটাইডে
জড়িত থাকে,
যা এনকোড
করে ভাইরাল
প্রোটিন ওআরএফ৮-এর মধ্যকার
অ্যামাইনো এসিডের
৮৪ নম্বরের
অবশিষ্টাংশকে।
এখন নিউক্লিওটাইডে যদি
থাইমাইন বেস
(ক্লেড ১)
থাকে তবে
সিকোয়েন্স অ্যামাইনো
এসিড লিউসিনকে
এনকোড করে। আর
যদি এটার
সাইটোসিন বেস
(ক্লেড ২)
থাকে তবে
সিকোয়েন্স এনকোড
করে সেরিনকে। আরেকটি
পার্থক্য হচ্ছে
জিন ওআরএফবির
নিউক্লিওটাইডের জিনে,
যেখানে হয়
সাইটোসিন (ক্লেড
১) অথবা
থাইমাইন (ক্লেড
২) উভয়
ফলাফল নিউক্লিওটাইড
সিকোয়েন্স সেরিনকে
এনকোড করে।
এদিকে কীভাবে মানুষ
সংক্রমিত হয়েছে
তার এপিডেমিওলজিক্যাল প্রমাণের
সঙ্গে ভাইরাল
জিনোমের সংমিশ্রণ
দেখায়, ছয়জন
লোকের ভাইরাল
জিনোম এটা
প্রতিষ্ঠিত করেছে
যে উহানের
বাজার থেকে
ক্লেড ১-এর ক্লাস্টারের
সঙ্গে উহানের
সম্পৃক্ততা রয়েছে,
অন্যদিকে তিনটি
কেসে ক্লেড
২ ক্লাস্টার
দেখা গেছে। যাতে
বাজারের সঙ্গে
সম্পৃক্ততা পাওয়া
যায়নি। এই ডাটা
যা বলছে
তা হলো,
বাজার মহামারীর
উৎস নাও
হতে পারে। বিপরীতে
তারা যা
বলে তা
হলো ক্লেড
১ ও
ক্লেড ২
উভয়ের উত্পত্তি
সাধারণ ভাইরাল
পূর্বপুরুষ থেকে
এবং তা
একই সময়ে
স্বাধীনভাবে ছড়িয়ে
পড়ে। যেখানে ক্লেড
১ শুরু
হয় বাজার
থেকে এবং
ক্লেড ২
বাইরে থেকে। সুতরাং,
প্রাণী থেকে
মানব সংক্রমণ
হয়তো অন্য
কোথাও সংঘটিত
হয়েছিল, যার
ট্রান্সমিশন চেইন
বাজারে এসে
তাদের পথ
খুঁজে পেয়েছে। যেখানে
মানুষের সমাগম
বেশি ও
সংবেদনশীলতাও বেশি।
বিভিন্ন ধরনের সার্স-কোভ-২-এর প্রচলন
এখন এসে
বিতর্কের বিষয়
হয়ে দাঁড়িয়েছে,
যা স্বতন্ত্র
ফাইলোজেনেটিক বংশের
পর্যবেক্ষণ থেকে
উদ্ভূত। তবে ভাইরাসগুলোর
মাঝে এ
ধরনের জিনগত
বিচ্যুতি নবিশ
ইমিউন সিস্টেমের
আলোকে (যা
বোঝায় যে,
ব্যক্তি এ
ভাইরাসের মুখোমুখি
আগে হয়নি)
প্রত্যাশিত। এটাকে ব্যাখ্যা
করা যেতে
পারে ‘ফাউন্ডার ইফেক্ট’ দিয়ে,
যা ভাইরাল
প্রাদুর্ভাবের সময়
খুবই স্বাভাবিক
ব্যাপার। যদি সীমিত
সংখ্যা ভাইরাল
রূপগুলো যথেচ্ছভাবে
নতুন ভৌগোলিক
অঞ্চলে প্রবেশ
করে, যেখানে
সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর
অবস্থান রয়েছে,
সেখানে তাদের
পরবর্তী বিস্তৃতি
স্থানগুলোতে রূপগুলোর
আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে
সহজ করে
দেয়।
তবে নির্দিষ্ট জনগণের
মাঝে রূপগুলো
ব্যাপকতায় অন্য
অঞ্চলের আক্রান্ত
জনগোষ্ঠীর তুলনায়
ভিন্নতা রয়েছে
এবং ভাইরাল
প্রতিলিপি এবং
সংক্রমণ বিবেচনায়
সেই রূপগুলোর
উন্নত ফিটনেস
সমান হওয়া
জরুরি নয়। এই
ধারণা অনুযায়ী,
দুটি ক্লেড
অথবা কোনো
সাবক্লেডের মধ্যকার
মিউটেশনে কোনো
ধরনের সংযুক্তির
প্রমাণ পাওয়া
যাবে না
এবং ক্লিনিক্যাল
প্যারামিটারগুলো কভিড-১৯-এর
তীব্রতার ক্যাটাগরিগুলো
মূল্যায়ন করে। যদিও
এই আবিষ্কার
একেবারে বিস্ময়কর
কিছু না,
যেখানে দুটি
ক্লেড আলাদা
হচ্ছে সার্স-কোভ-২
জিনোমের ৩০
হাজার নিউক্লিওটাইডের মাত্র
দুটি নিউক্লিওটাইড
দ্বারা।
এখন দুটি আলাদা
বংশের সার্স-কোভ-২
দ্বারা সংক্রমণের
কারণে ক্লিনিক্যাল
ফলাফলগুলোতে কোনো
পার্থক্য দেখা
না গেলেও
মানব হোস্টের
ইমিউন সিস্টেমগুলোর
বিভিন্ন প্যারামিটার
বিশ্লেষণ করে
রোগের তীব্রতার
কারণগুলো চিহ্নিতগুলো
করা গেছে। যেখানে
চার ধরনের
রোগীকে বাছাই
করা হয়। প্রথম
ধরনের রোগী
হচ্ছে যাদের
কোনো উপসর্গ
নেই, এরপর
দ্বিতীয় ধরনের
রোগীদের মৃদু
উপসর্গ রয়েছে,
পরের শ্রেণীর
রোগীদের মারাত্মক
উপসর্গ রয়েছে
এবং শেষ
ধরনের রোগীরা
হচ্ছে যারা
এতটাই অসুস্থ
যে শ্বাস-প্রশ্বাস সচল
রাখার জন্য
ভেন্টিলেশন দিতে
হয়েছে। এর সঙ্গে
অতীতের গবেষণা
থেকে দেখা
গেছে যারা
বয়স্ক, যাদের
অন্যান্য শারীরিক
সমস্যা রয়েছে
এবং পুরুষদের
মধ্যে রোগের
তীব্রতা বেশি
রয়েছে।
রক্তের নমুনা পরীক্ষা
করে এক
শ্রেণীর রোগীদের
লিম্ফোসাইটিসের আশ্চর্যজনক
স্বল্পতা দেখা
গেছে। আরেক ধরনের
রোগীদের উচ্চমাত্রায়
সাইটোকিনস আইএল-৬ এবং
আইএল-৮
উপস্থিতি দেখা
গেছে, যা
কিনা প্রদাহ
বাড়ায়। যার ধারাবাহিকতায়
সাইটোকিন স্ট্রোম
হতে পারে। এখন
আইএল-৬
অথবা আইএল-৮-এর
মধ্যকার এই
বিপরীত সম্পর্ক
রোগের তীব্রতাকে
অনেকটাই বাড়িয়ে
দিতে পারে।
অবশ্য লিম্ফোসাইটোপনিয়া ও
সাইটোকিন স্ট্রোম
কোনোটাই কভিড-১৯-এর
জন্য বিশেষ
কিছু না। এগুলো
শ্বাস-প্রশ্বাসের
অনেক সংক্রমণের
বৈশিষ্ট্য।
তবে কভিড-১৯
বিবর্তনকে শনাক্ত
করা গুরুত্বপূর্ণ
জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত
সিদ্ধান্তের জন্য,
যেন রোগের
বিস্তারকে সীমিত
রাখা যায়। বিশৃঙ্খল
প্রতিরোধক্ষমতার কারণ
এবং কর্মপ্রক্রিয়া
সম্পর্কে জানার
পাশাপাশি কভিড-১৯-এর
গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল
এবং আণবিক
হলমার্কগুলোও বুঝতে
হবে। এর ফলে
চিকিৎসা পদ্ধতি
এবং কার্যকর
ভ্যাকসিন আবিষ্কারও
অনেক সহজ
হবে। এছাড়া ভবিষ্যতের
মহামারীকে রুখতে
হলেও এ
বোঝাপড়া সেরে
নেয়া জরুরি।
নেচার ম্যাগাজিন