অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম বৈষম্যমূলক পন্থায় চালুর চেষ্টা হবে আত্মঘাতী

বণিক বার্তা অনলাইন

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পুনরুদ্ধারে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এটি শুরু করতে হবে। অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত ও বৈষম্যমূলক পন্থায় তা চালুর চেষ্টা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আত্মঘাতী।

আজ বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। এতে বেশ কিছু দাবি জানিয়ে বলা হয়, শুরুতে শুধু স্নাতকোত্তর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন শিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের আগে স্নাতক শ্রেণির ক্লাস শুরু করা অনুচিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদ। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক বক্তব্য দেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালুর আগে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর প্রতিবন্ধকতা ও পূর্বশর্তগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রতিকার ও পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই কেবল অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যাওয়া যেতে পারে।

অনলাইন শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী আকারে দেখা দেবে। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও সক্ষমতা এখনো অনলাইন কার্যক্রম চালানোর ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। করোনার দুর্যোগকালীন বিশেষ শিক্ষাপঞ্জি তৈরি করে সেই সময়সীমার মধ্যে শেখানো সম্ভব—এমন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিও করা হয়নি। মহামারীর কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাড়ি ফিরে গেছেন এবং প্রান্তিক স্থানে উপযুক্ত ইন্টারনেট–সংযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন তাঁদের নতুন করে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন কেনারও সামর্থ্য নেই। ইন্টারনেট সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তা শিক্ষার্থীদের কাছে বিনা মূল্যে পৌঁছানো ছাড়া শিক্ষাকে অনলাইনে নিয়ে গেলে তা নতুন ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করবে।

সংবাদ সম্মেলনে একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের ২০০ জনের একটি ক্লাসের জরিপে দেখা গেছে, ৪০ জন শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়ার মতো যন্ত্র (ডিভাইস) বা ইন্টারনেট কেনার মতো অর্থ নেই। অনুমান করা যেতে পারে, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই অনুপাতটি আরও বেশি হবে। ভার্চুয়াল পরিবেশে ক্লাস নেয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তা অধিকাংশ শিক্ষকেরও নেই।

এ রকম অবস্থায় বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট এবং দেশের সব অঞ্চলে প্রয়োজনীয় গতির ইন্টারনেট প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে সংকটে থাকা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য মাসে তিন হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তুতি রাখা। কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জনের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা। অর্থনৈতিক বিবেচনায় দুঃসাধ্য হলে তা দীর্ঘমেয়াদি সুদহীন ঋণ হিসেবে দিতে হবে। এসব শিক্ষার্থী নির্বাচন বিভাগীয় পর্যায়ে হবে এবং এ ক্ষেত্রে অনিয়ম রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। মহামারীর এই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের চাকরি ও পূর্ণ বেতন নিশ্চিত করতে হবে।

‘ই-লার্নিং’ কনটেন্ট তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইনে ই-শিক্ষণ চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।

এ ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এই আইন বহাল রেখে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু হলে শিক্ষকেরা প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন