কভিড-১৯: সংকটে বৈমানিক প্রশিক্ষণ একাডেমি

জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ

মনজুরুল ইসলাম

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক এয়ারলাইনস সংস্থাগুলোর মতো সংকটে পড়েছে বৈমানিক প্রশিক্ষণ একাডেমিগুলোও। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে আয়ে। অবস্থায় প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের জন্য পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে কেনা জ্বালানি তেল এভি গ্যাসের মূল্য হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি।

জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের আবেদন জানিয়ে গত ২৯ জুন বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের ব্যবহূত প্রতি লিটার এভি গ্যাসের (১০০এলএল) মূল্য বর্তমানে ২৫২ টাকা, যা ছাত্রদের প্রশিক্ষণ খরচের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পড়ে। কারণে বহু প্রতিভাবান ছাত্র প্রশিক্ষণ শেষ না করেই ঝরে পড়েন। অবস্থায় ফ্লাইট ট্রেনিং একাডেমিগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে ছাত্রদের বর্তমান অবস্থা থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে এভি গ্যাসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়ার আশা করছে ফ্লাইং একাডেমিগুলো।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় গত ১২ জুন পদ্মা অয়েল কোম্পানি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করে, আগের তুলনায় যা প্রতি লিটারে গড়ে ১৪ টাকা কম। সে সময় বৈমানিক প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের জন্য ব্যবহূত এভি গ্যাসের মূল্যও হ্রাস হওয়ার আশা করেছিল একাডেমিগুলো।

গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ফ্লাইং একাডেমিগুলো ভালো অবস্থায় নেই। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসগুলো অনলাইনে নেয়া হচ্ছে। রাজশাহীতে উড়োজাহাজে ফ্লাইং প্রশিক্ষণ চলছে মাত্র ১০-১২ জনের।

তিনি বলেন, দেশে এভি গ্যাস ব্যবহার হয় শুধু তিনটি ফ্লাইং একাডেমিতে। এর একটি এয়ার ফোর্সের, বাকি দুটি বেসরকারি। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে মাত্র এক লাখ লিটার এভি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সরকার ব্যবস্থা নিলে এভি গ্যাস দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে লিটারপ্রতি ১১০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবে ফ্লাইং একাডেমিগুলো। এতে বৈমানিক প্রশিক্ষণের খরচও কমবে।

জানা গেছে, গত ২৫ জুন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় এভি গ্যাসের (১০০এলএল) মূল্যহ্রাসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আগ্রহ দেখান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। এর আগে গত বছর ১১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এওএবি সদস্যদের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেও প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়ে সহানুভূতিশীল আগ্রহ দেখান।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে টিকতে না পেরে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে আরিরাং ফ্লাইং একাডেমি। গত ২৮ জুন ফ্লাইং একাডেমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী একাডেমিতে বৈমানিক হওয়ার শিক্ষা নিচ্ছিলেন। এসব শিক্ষার্থীকে ফোন করে বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক শিল্প গ্রুপ ইয়াংওয়ানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আরিরাং ফ্লাইং একাডেমি ২০১০ সালে অনুমোদন পায়। গত কয়েক বছরে আরিরাং ফ্লাইং একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া শতাধিক বৈমানিক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি সব এয়ারলাইনসে কর্মরত আছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন