ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বনামধন্য শিল্পপতি এবং ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান গতকাল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন) গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, পুত্র দুই কন্যাসহ আত্মীয়-স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে তথ্য নিশ্চিত করে ট্রান্সকম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, মরহুম লতিফুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই বেশ অসুস্থ ছিলেন। জীবনের শেষ সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতেই কাটিয়েছেন তিনি। মরহুমের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ বাদ এশা গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাতেই তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

দৌহিত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতেই প্রয়াত হলেন দেশের প্রথিতযশা ব্যবসায়ী। চার বছর আগে দিনটিতে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ফারাজ আইয়াজ হোসেন।

লতিফুর রহমানের জন্ম ভারতের জলপাইগুড়িতে, ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। পড়াশোনা শুরু সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে পরে শিলংয়ের সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে। ১৯৫৬ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন তিনি। ঢাকায় ফিরে আসেন ১৯৬৫ সালে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হলেও ঢাকায় থাকতেন গেন্ডারিয়ায়। তার স্ত্রীর নাম শাহনাজ রহমান। 

ঢাকায় এসে ১৯৬৬ সালে ডব্লিউ রহমান জুট মিলে ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। দেড় বছর কাজ শেখার পর নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। এভাবে কাজ করেন ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এরপর চিন্তাভাবনা করতে থাকেন নতুন কিছু করার। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রায় শূন্য হাতে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। যাত্রা করে বর্তমান বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপ ট্রান্সকম। গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে আমৃত্যু অধিষ্ঠিত থেকে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন তিনি। তার হাত ধরে ট্রান্সকম গ্রুপের শুরু হয়েছিল চা ব্যবসার মাধ্যমে। বর্তমানে গ্রুপের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ১৬টি বড় বড় প্রতিষ্ঠান। সফলভাবেই কোমল পানীয়, ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক পণ্য, ওষুধ, মিডিয়া, চা শিল্প, বীমা ইত্যাদি ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে ট্রান্সকম।

এছাড়াও লতিফুর রহমান নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। ছিলেন লিন্ডে বাংলাদেশ এবং এনজিও ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের পরিচালক। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম সততার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে অর্জন করেন ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নোবেল বলে খ্যাত বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড।

শোক প্রকাশ

লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সবাই মরহুমের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম গভীর শোক দুঃখ প্রকাশ করে এক বার্তায় বলেন, লতিফুর রহমান ১৯৯৪-৯৬ মেয়াদে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন। সে সময় তিনি তার কর্মদক্ষতার মাধ্যমে সামনে থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে দেশের ব্যবসায়ী অঙ্গনে এক শূন্যতা তৈরি হলো, যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। এফবিসিসিআই পরিবার তার আত্মার শান্তি কামনা করে।

গভীর শোক সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকেও। সংগঠনটির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং বিশেষ করে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন লতিফুর রহমান। তার মৃত্যুতে দেশবাসী একজন সফল উদ্যোক্তাকে হারাল, যা আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

ব্যবসায়ীদের আরেক সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) পক্ষ থেকেও লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতের থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সিইও ফেরদৌস আরা বেগম এক শোক বার্তায় বলেন, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, ব্যবসায় উদ্যোগ সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতির প্রতি তার দায়িত্বশীল অবদান সর্বদা শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ ডাচ্-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আনোয়ার শওকত আফসার পৃথক দুই শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে এমন একজন নীতিবান মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল। অনেকে অনেক সময় ভুল বুঝে থাকতে পারেন, কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। দেশে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবসাসফলভাবে সংবাদপত্র চালানো সম্ভব, তা তিনিই প্রথম প্রমাণ করেছেন। পেশাদারিত্বে তিনি শতভাগ বিশ্বাস করতেন।

লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, দেশের শিল্প-বাণিজ্যের অন্যতম পথিকৃৎ লতিফুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের কাছে তিনি সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন