উত্তরাঞ্চলে বন্যা

খাদ্য সংকটে দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি মানুষের

বণিক বার্তা ডেস্ক

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। গতকালও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাদুধকুমারসহ অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সপ্তাহব্যাপী বন্যায় খাবার সুপেয় পানি সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্রের পানি গতকাল চিলমারী পয়েন্টে বিপত্সীমার ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপত্সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অবস্থায় জেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে দেড় লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের।

এদিকে জেলার নয় উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসহ সবজি ক্ষেত।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার পার্বতীপুর চরের মজির আলী জানান, এক সপ্তাহ ধরে পার্বতীপুর চরের সব ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িতে শুকনো জায়গা না থাকায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণে শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে তাদের।

একই চরের সবিরন, রব্বানী জানান, প্রতি বছর বন্যার আগে কিছু খাবার ঘরে মজুদ রাখতেন তারা। কিন্তু বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ সময় কর্মহীন রয়েছেন তারা। তাই ঘরের সামান্য খাবার শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ধারদেনা করে একবেলা খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করছেন।

ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের সদস্য মাইনুদ্দিন ভোলা জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার পানিবন্দি মানুষের জন্য গতকাল চার টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আজকের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের মতো অবস্থা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা দুধকুমারের অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী রাজারহাট উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩০২ টন চাল শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ১০০ টন চাল কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ: জেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে পাঁচ উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের হাজার ৯২৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২২টি শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলের ১৭ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুর উপজেলায় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, বন্যায় সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর চৌহালী উপজেলার ৩১টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে ২১৬টি গ্রামের ২৪ হাজার ৯২৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৬ দশমিক কিলোমিটার রাস্তা বাঁধ এবং প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বগুড়া: জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় গতকাল যমুনার পানি বিপত্সীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া সোনাতলায় যমুনা বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।

সোনাতলা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিন ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

সোনাতলা উপজেলার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতিতে ২০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়াও নগদ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা গতকাল থেকে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, গতকাল দুপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে ৬৬ সেন্টিমিটার বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকে পানি আর বাড়েনি। এখন পর্যন্ত অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ নদীর পানি না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো এবং পাট, ধানসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন