‘ভবিষ্যত প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে ওনার জীবন থেকে’

তপন চৌধুরী

মন খুব খারাপ হয়ে আছে এত কাছের একজন মানুষ চলে যাওয়ায়। আমাদের সঙ্গে  ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের পরিচয় দীর্ঘদিনের, অনেক বছরের। তিনি ছিলেন আমার বাবার ছোট ভাইয়ের মতো। তিনি, মঞ্জুর এলাহী সাহেব (এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ), আইসিসির মাহবুবুর রহমান সাহেব (আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান) ওনারা সবাই খুবই কাছের। আমরা কলেজ জীবন থেকে দেখছি বাড়িতে আসা-যাওয়া, পারিবারিকভাবেই আমাদের ঘনিষ্টতা ছিল। দেশে-বিদেশে ওনারা সবাই একসঙ্গে ট্রাভেল করতেন। 

তার (লতিফুর রহমান) অনেক ধরনের বড় অবদান থাকলেও সবথেকে বড় কথা হলো বর্তমান সময়ে এইরকম একজন নীতিবান মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল। অনেকে অনেক সময় ভুল বুঝে থাকতে পারেন কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে উনি কখনো আপস করেননি। অনেক সময় মানুষ পরিবেশ বুঝে চুপ থাকে, কার পছন্দ হল বা কার অপছন্দ এসব ভেবে মাঝামাঝি একটা অবস্থান নেয়। কিন্তু তিনি ছিলেন দৃঢ় মানসিকতার, সাদাকে সাদাই বলতেন আর কালোকে কালো। এজন্য তাকে অনেক কষ্টও করতে হয়েছে। বিপদে পড়তে হয়েছে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল- এই দেশে সংবাদপত্র চালানো, এটা যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে চালানো সম্ভব এবং ব্যবসা সফল করার সম্ভব, এটা উনিই প্রথম প্রমাণ করেছেন। পেশাদারিত্বে তিনি শতভাগ বিশ্বাস করতেন। আমরা যারা কাছের তারা জানি; তিনি কখনোই সংবাদের মধ্যে সম্পৃক্ত হতেন না। কোনদিনও হস্তক্ষেপ করতেন না, তাই মানুষ জানতেন যে সংবাদপত্র দুটি মতি ভাই (প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান) আর মাহফুজ ভাইয়ের (ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম), এটাই ছিল তার সৌন্দর্য এবং এটাই হওয়া উচিত। উনি কিন্তু ওনার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে দিয়ে তিনি অন্যকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিতেন। 

তিনি ছিলেন ফ্যামিলি ম্যান। পরপর দুটি বড় ঘটনা ওনাকে সইতে হয়েছে। প্রথমে মেয়েকে (বাসাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাজনীন তাসনিম রহমান) হারালেন, সেই ঘটনা নিয়েই আবার কোর্ট কাচারি। এত কিছুর পরও তিনি আপস করেননি। এরপর আবার চার বছর আগে এই দিনেই নাতি ফারাজকে (গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন) হারাতে হলো। খুবই দুঃখের সময় কেটেছে। বর্তমান যে কভিড- ১৯ মহামারীতে কাবু হওয়া অর্থনীতি, এটাকে পুনরুদ্ধারেও তিনি ভূমিকা রাখতে পারতেন কারণ তিনি ছিলেন ভিশনারি ম্যান। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনে যতবারই ওনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে দেখেছি তিনি ছিলেন খুবই ভালো একজন মেনটর। 

সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ, ‘হি ওয়াজ এ ভেরি লাভিং পারসন’। তার কথা বার্তা ব্যবহার চাল চলন খুবই বিনয়ী মানুষ। তিনি যে একজন অর্থবিত্তশালী মানুষ তার ব্যবহার বা কথায় কখনো প্রকাশ পেতো না। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। একজন আদর্শ মানুষ, ভবিষ্যত প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে ওনার জীবন থেকে। তার ভালোটাই আমাদের সঙ্গে থাকবে আশা করি। দেশের জন্য তার চলে যাওয়া অনেক বড় ক্ষতি। 

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন