বন্দরে মাশুল সুবিধা তুলে নেয়ার প্রভাব

খাতুনগঞ্জে আদা ও রসুনের বাড়তি সরবরাহ, কমছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় মার্চে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি ওই সময় পরিবহন সমস্যার কারণে খালাসের পর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্যের মজুদ বাড়তে শুরু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খালাস-পরবর্তী পণ্য সরিয়ে নিতে নির্ধারিত সময়ের পর বাড়তি মাশুল মওকুফ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৬ মে পর্যন্ত সুবিধা বলবৎ ছিল মাশুল উঠে যাওয়া কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় আমদানিকারকরা আদা-রসুনের মতো কাঁচা মসলাপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে দেন ফলে বাড়তি সরবরাহে এরই মধ্যে আদা রসুনের দাম অনেকটাই কমে গেছে

গতকাল দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো ঘুরে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ৫৩-৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায় দেশে সাধারণ ছুটি চলাকালে এসব রসুনের দাম কেজিপ্রতি ১২০-১৫০ টাকায় উঠেছিল গতকাল চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায় সাধারণ ছুটি চলাকালে আমদানি করা এসব আদার কেজি ২৮০-৩০০ টাকায় উঠেছিল

ওই সময় বন্দরে খালাসের পর মাশুলবিহীন পণ্য রাখার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অনেক আমদানিকারক ব্যবসায়ী আদা-রসুনের মতো কাঁচা মসলাপণ্যের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে কয়েক মাস আদা রসুনে অস্বাভাবিক লাভ করলেও বর্তমানে লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও

স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণ ছুটি চলার সময় দেশে আদা রসুনের দাম অনেকটাই বেড়ে যায় ওই সময় বন্দরে মাশুলবিহীন পণ্য মজুদ রাখার সুযোগ থাকায় অনেক আমদানিকারক ব্যবসায়ী বাজারে পণ্য আনেননি ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় বেড়ে যায় দাম তবে জুন থেকে দেশে সাধারণ ছুটি বাতিল হয় করোনা মহামারীর মধ্যেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় ওই সময় থেকে কনটেইনারে আসা কাঁচা মসলাপণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় মজুদ রাখতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে ফলে অনেক আমদানিকারক ব্যবসায়ী একসঙ্গে পণ্য বাজারে এনেছেন এতে পাইকারি বাজারে আদা রসুনের সরবরাহ অনেকটাই বেড়ে গেছে ফলে দামও কমতে শুরু করেছে

খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বণিক বার্তাকে বলেন, বাজেটে শুল্ক হার কমানোর কারণে আমদানি করা রসুনের দাম এমনিতেই কমতির দিকে রয়েছে এছাড়া বন্দরে দীর্ঘ সময় পণ্য রাখার সুযোগও এখন আর নেই এসব কারণে বাজারে রসুন আদার সরবরাহ অনেক বেশি সাধারণত প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে ১০-১২ ট্রাক আদা রসুন সরবরাহ হয় এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে ফলে সরবরাহ বেড়ে দরপতন দেখা দিয়েছে তবে কোরবানি ঈদের আগে চাহিদা বাড়লে আদা রসুনের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে

উল্লেখ্য, স্বাভাবিক সময়ে জাহাজ থেকে খালাসের পর বন্দরের অভ্যন্তরে যে কোনো পণ্য সর্বোচ্চ চারদিন মাশুলবিহীন মজুদ রাখার সুবিধা দেয়া হয় সময়ের মধ্যে পণ্য সরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলে কয়েক ধাপে মাশুল দিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরেই আমদানি করা পণ্য মজুদ রাখা যায় পঞ্চম দিন থেকে প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের জন্য ডলার মাশুল দিতে হয় এরপর পরবর্তী সপ্তাহে প্রতিদিন হিসাবে ১২ ডলার এবং ২১তম দিনের পর থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হারে মাশুল গুনতে হয় আমদানিকারকদের

করোনা মহামারীতে সাধারণ ছুটি চলার সময় ২৬ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত খালাস হওয়া পণ্যের মজুদে শতভাগ মাশুল তুলে নেয়া হয় পরবর্তী সময়ে ১৭ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মাশুলযুক্ত পণ্য বা কনটেইনারে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয় কারণে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমদানি করা আদা রসুনের অনেকগুলো চালান দীর্ঘদিন বন্দরে ফেলে রাখার পর সম্প্রতি বাজারে এনেছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন