এনবিএফআই এমডিদের সঙ্গে গভর্নরের বৈঠক

পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা পরিস্থিতি সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) এজন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের দাবিসহ ছয় প্রস্তাব নিয়ে গভর্নরের কাছে গিয়েছিলেন খাতের শীর্ষ নির্বাহীরা। বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হলেও বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বৈঠকে তহবিল গঠন ছাড়া এনবিএফআইগুলোর অন্য প্রস্তাবে ভালো সাড়া দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শিগগিরই এসব বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়, বিদ্যমান আইনে এনবিএফআইগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ নেই। তহবিল থেকে অর্থ ধার নিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যারান্টি দিতে হবে। যদিও দেশের অর্ধেকের বেশি এনবিএফআইয়ের গ্যারান্টি দেয়ার সক্ষমতাই নেই। এক্ষেত্রে এনবিএফআইগুলোর দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর কথা বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জবাবে বিএলএফসিএ নেতারা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বৈঠকে বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ওপর একটি তথ্য বিবরণী তুলে ধরা হয়। এতে খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক নেতিবাচক সব দিকই উঠে আসে। সময় বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের এসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বেড়ে উঠেছে এনবিএফআইগুলোর ঋণ সহায়তা হিসেবে। এসএমই খাতে মোট বিনিয়োগের ১৪ শতাংশের জোগান দিয়েছে এনবিএফআইগুলো। গত পাঁচ বছরে খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে হাজার কোটি টাকার কর দিয়েছে। চলমান দুর্যোগে এনবিএফআইগুলো ধসে গেলে দেশের গোটা আর্থিক খাতেই বিশৃঙ্খলা নেমে আসবে। এজন্য খাতটিকে বাঁচানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা দরকার।

এনবিএফআই এমডিদের এমন দাবির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, আইনি সীমাবদ্ধতা বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করতে পারবে না। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। সরকার চাইলে তবেই তহবিল গঠন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে এনবিএফআইগুলো পরিস্থিতি জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে পারে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মতামত চাওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক মত দেবে।

বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বিএলএফসিএর ভাইস চেয়ারম্যান ইসলামিক ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি আবু জাফর মো. সালেহ। বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ছয়টি প্রস্তাব নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রধান দাবি ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের। বৈঠকে সবকয়টি বিষয়েই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের আইনি সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছে। তার পরও আমরা আশা করছি, সরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এক-দুটি প্রতিষ্ঠান মারা গেলে পুরো খাতই টালমাটাল হয়ে যাবে।

দেশে চালু ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্ব্বর পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ না করলেও ঋণখেলাপি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কিছুটা সুরক্ষা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকালের বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ব্যাংকগুলো এনবিএফআইকে দেয়া ঋণ আমানতের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করছে ব্যাংক। আবার সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদহার শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ ব্যাংক এনবিএফআইয়ের কাছ থেকে ১২-১৩ শতাংশ হারে সুদ আদায় করছে।

বৈঠকে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী এনবিএফআইগুলোর জন্য আমানতের সুদহার ঋণের সুদহার শতাংশ কার্যকর করার দাবি জানায় বিএলএফসিএ।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেয়া সবকয়টি প্রণোদনা প্যাকেজে এনবিএফআইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, এসএলআর শতাংশ কমানো, অনাদায়ী ঋণ আদায়ের নতুন তফসিল প্রকাশ, পুনর্গঠনের সময়সীমা বৃদ্ধিসহ পুনর্গঠন নীতিমালার উদারীকরণের দাবি জানানো হয় বৈঠকে। এসব দাবি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে বৈঠকে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. মনিরুজ্জামান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম, বিএলএফসিএ সভাপতি আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের এমডি মো. মমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি এনবিএফআইয়ের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন