কভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির পথে শুধু গতিই একমাত্র বিষয় নয়।
সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে এর সঠিক কার্যকারিতা ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের বিষয়টিও।
ভ্যাকসিন পেতে আরো ছয় মাস, কিংবা এক বছরও লেগে যেতে পারে।
কিছু কোম্পানি হয়তো সঠিক সময়ে ফিনিশিং লাইন ছুঁতে পারবে না।
তাতে কি তাদের অর্জন বিফলে যাবে? হয়তো না।
ডজনখানেক কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে আরো অধিকতর সংক্রমণ হ্রাসকারী, দীর্ঘস্থায়ী ইমিউনিটি সৃষ্টি করা, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও নাজুক মানুষদের রক্ষা, বিপুল পরিমানে ভ্যাকসিন তৈরি ও তা বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ভ্যাকসিন তৈরিতে যারা সামনের সারিতে রয়েছে, তারা এসব সুযোগ হয়তো পাবে না।
বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস প্রতিষ্ঠিত ভ্যাকসিন কর্মসূচির বৈশ্বিক জোট ‘গ্যাভি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেথ বার্কলে বলেন, ‘এটা কি খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প? হয়তো একটি ভ্যাকসিন আমরা ব্যবহার শুরু করলাম যা আদর্শ নয়, এরপর আমরা অন্যটিতে গেলাম।’
ভ্যাকসিন তৈরি করছে এমন ১০০ প্রার্থীর অন্যতম খ্যাতিমান ওষুধ কোম্পানি সানোফি, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ও মার্কঅ্যান্ডকো।
তবে তারা দৌড়ে বেশ ‘পিছিয়ে’।
তারা এখনো মানুষের শরীরে ট্রায়াল শুরু না করলেও প্রাণঘাতী কভিড-১৯ থামাতে কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরিতে রয়েছে সামনের সারিতে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ওয়েলকামের ভ্যাকসিন কর্মসূচির প্রধান চার্লি ওয়েলার বলেন, ‘এই পর্যায়ে সবকিছু এখনো প্রক্রিয়াধীন।
এ পথে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ, যা অনেক প্রার্থীকে ছিটকে ফেলবে।
তাই আমাদের বহু পন্থায় এগোতে হবে।’
একাধিক কোম্পানিকে কোটিরও ওপরে ডোজ তৈরি করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বে প্রয়োজন।
আবার অনেক মানুষের শরীর শুরুতে ভ্যাকসিনে সাড়া নাও দিতে পারেন বলে মনে করেন সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর মাইকেল কিঞ্চ।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও তাদের সহযোগী অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ইম্পেরিয়াল কলেজ, মডার্না, পিফিজার ও চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিসসহ প্রায় এক ডজন কোম্পানি এরই মধ্যে মানুষের দেহে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করেছে।
তারা রেকর্ড সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অনেকে তো এই বছরেই ভ্যাকসিনের ডোজ মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনাও করছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভ্যাকসিন মিশনে নেতৃত্ব দেয়া প্রফেসর রবিন স্যাটোক বলেন, ‘আমি মনে করি না, প্রথম ভ্যাকসিনটা সত্যিকারের ভ্যাকসিন হিসেবে প্রমাণিত হবে, কেননা সেই পর্যায়ে পৌঁছতে ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার শুরু হতে হবে।’ তিনি জানান, অক্টোবরে আরো ব্যাপকভিত্তিক গবেষণায় নামবেন তারা।
একটি কোম্পানির সফল হওয়া মানেই যে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে জয়লাভ করা হয়ে যাবে, এমনটি ভাবছেন না চার্লি ওয়েলার।
তিনি মনে করেন, বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য একাধিক কোম্পানিকে ভ্যাকসিন তৈরিতে সফলতা দেখাতে হবে।
আরেকটি জটিলতা নিয়ে আগেভাগেই কথা বললেন ওয়েলার, ‘অপেক্ষাকৃত গরম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্যাকসিন পৌঁছানো জটিল হতে পারে, কেননা সেখানে কোল্ড স্টোরেজ সরবরাহ চেইনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, লাগতে পারে বহু ডোজও।’
ব্রিউয়ার মনে করেন, সামনের সারির কোম্পানির মধ্যে অনেকেই ব্যর্থ হবে, হয়তো দু-একটি সফলতা পাবে।
তার কথায়, ‘দীর্ঘস্থায়ী গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বলতে হবে, আমাদের ভাবা উচিত নয় যে দ্রুততম মানেই সবসময় সেরা।’
ব্লুমবার্গ