বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মূখ্য সচিবের সঙ্গে ১২ জেলার ডিসিদের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে নেমে আসা বানের পানি, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলার ছয়টি জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হলেও অবনতি হচ্ছে অন্য জেলাগুলোতে। করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যেগ নিতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার অতিবৃষ্টির কারণে সাম্প্রতিক সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মন্ত্রণালয়সমূহের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, খাদ্য সচিব, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারসহ ১২টি জেলার জেলা প্রশাসকগণ ভিডিও কনফারেন্সিং- এ সংযুক্ত ছিলেন।

জানাগেছে, বৈঠকে সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা জানান। সেখানে তারা মাঠ প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বন্যার কারণে বিভিন্ন জেলায় আউশ ধান, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানান তারা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বন্যা পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বরাদ্দকৃত ত্রাণসহ বন্যা মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বন্যা মোকাবেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জেলা প্রশাসকদের র্নিদেশনা প্রদান করেন।

জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ জেলার বন্যা পরিস্থিতি ও গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা মাঠ প্রশাসনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংরক্ষণ ও মেরামত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং কৃষিখাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণর্পূবক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনকে উদ্ধার ও পুর্নবাসনের জন্য ইউনিয়ন/ওর্য়াড কমিটিসমূহ র্সাবক্ষণিক কাজ করছে। বন্যাকবলিত ৯টি জেলায় এ পর্যন্ত ৬৬০ মে. টন জিআর চাল ও ৬৭ লক্ষ টাকা জিআর ক্যাশ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বণিক বার্তাকে বলেন, জেলার বন্যা পরিস্থিতি এখন ভালো। পানি কমতেছে। সকাল ৯ টা থেকে ১২ পর্যন্ত ৩ সেন্টিমিটার পানি কমে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আউশ, পাট, সবজির ক্ষতি হয়েছে। ৩৫০০ হেক্টর জমির আউশ, পাট, সবজি এবং বাদামের ক্ষতি হয়েছে। এসকল এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। পরে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের বন্যা পরিস্থিতি এবং প্রস্তুতি আজকের বৈঠকে তুলে ধরেছি। এখন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।জেলার ৯ টি উপজেলায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়েনে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা নগদ অর্থ ও চাল বিতরণ করছি। পানি নেমে যাওয়ার পরে এই এলাকায় নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়। সেই ভাঙন রোধে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কিছু পয়েন্ট নির্ধারণ করেছি। ওই পয়েন্টগুলো নিয়ে আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছি। এখন যদি বরাদ্দ পাই, অনুমোদ পেলে আমরা আপৎকালীন ব্যবস্থা করবো। 

তিনি বলেন, আরেকটা বিষয়ে আমাদের সুপারিশ হলো এখানে স্থায়ী সমাধান চাই মানুষ। সেটার জন্য নদীর ড্রেজিং করতে হবে। নদীর প্রবাহ বাড়লে, এতে ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। ধারণ ক্ষমতা বাড়লে পানি উপচে পড়বে না। আর মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের জেলায় এখনও বন্যা শুরু হয়নি। তবে পানি বাড়তেছে। যদিও পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে আছে। এতে করে জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই এলাকাগুলো বর্ষা মৌসুমে সব সময়ই হয়ে থাকে। তবে এখানে ক্ষতিকর প্রভাব শুরু হয়নি। এখন উত্তারাঞ্চলে বন্যা হচ্ছে। এই পানি নামার সময় বোঝা যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন