উত্তরাঞ্চলে বন্যা : বাড়ছে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। তলিয়ে যায় কয়েক হাজার ফসলি জমি, আউশ বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। পানিবন্দি ক্ষেতের অধিকাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন চাষীরা। দু-একদিনের মধ্যে পানি না নামলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা কৃষি বিভাগের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী উপজেলাসহ নয় উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।

এদিকে পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি এসব মানুষের শুকনো খাবার বিশুদ্ধ পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যাকবলিত এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০২ টন চাল শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলায় হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাকসবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।

এদিকে রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, আগামী মাসের - তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বেড়েছে গতকাল বেলা ৩টায় বিপত্সীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলের শতাধিক একর আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে জেলার ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

শুভগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান জানান, রতনকান্দি হাটখোলা থেকে শুভগাছা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের পাকা সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, যমুনার পানি উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বপাশে শুভগাছা-রতনকান্দি হাটখোলা পাকা সড়ক ডুবে গেছে। ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের জন্য ২৩ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এসব চাল বিতরণ করা হবে।

সড়ক জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, সদর উপজেলার মুলিবাড়ি-বাঐতারা সড়কের বাঐতারা স্লুইস গেটের পাশে যমুনার পানির চাপ বেড়েছে। পার্শ্ববর্তী যমুনা তীরবর্তী মানুষ সওজের সড়কের পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি কাজিপুর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কাজিপুরে ১৫ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বগুড়া: যমুনার পানিতে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় হাজার ৬৩২ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, যমুনা নদীতে পানি বেড়ে লোকালয়ে আসছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে পর্যন্ত উপজেলার পাট ক্ষেত তলিয়ে গেছে হাজার ৫৮৫ হেক্টর, সবজি ৫০ হেক্টর, আউশ হাজার ৯২০ হেক্টর, রোপা আমন ৬০ হেক্টর, ভুট্টা ১৫ হেক্টর কাঁচামরিচ হেক্টর। এখন পর্যন্ত উপজেলায় মোট হাজার ৬৩২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকালে যমুনা নদীর পানি ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্ট চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা কামালপুর সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের সবজি, পাট, বর্ষালী ধানসহ উঠতি ফসলি জমিতে আগের থেকে আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, গতকাল সকালে থেকে পানি বাড়ছে। বিকালে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বগুড়ার ধুনট উপজেলার কয়েকটি এলাকায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বৈশাখীর চরে পানি জমেছে, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, শহড়াবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন