ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা

ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ১০ লাখ মানুষ

বণিক বার্তা ডেস্ক

মৌসুমি বৃষ্টিতে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম প্রদেশে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সোমবার কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ১০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। একই সঙ্গে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরো ভয়ানক আকার ধারণ করছে বলে জানান তারা। খবর রয়টার্স।

রোববার ব্রহ্মপুত্র নদী প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই হাজার গ্রাম ডুবিয়ে দেয়। সোমবার সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছিল বলে জানা গেছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নদীটি তিব্বতের গঙ্গোত্রি হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বন্যার বিশেষ বুলেটিনে রাজ্যের এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যায় ডুবে অন্তত দুজন মারা গেছে। এছাড়া ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তীব্র বর্ষণে আসামের ৩৩টি জেলার অন্তত ২৩টিই প্লাবিত হয়েছে। ভারতের পানি সম্পদ বিভাগ সতর্ক করে বলছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী তিনদিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা।

আসামের পানিসম্পদ মন্ত্রী কেশব মহান্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, বেশ কয়েক জায়গায় বন্যা প্রতিরোধকারী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের বেশির ভাগ অংশ পানিতে ডুবে গেছে বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বনটি বিরল এক সিং-ওয়ালা গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত।

চা বাগানের জন্য বিখ্যাত আসামে প্রতি বছর মৌসুমি বন্যা আঘাত হানে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর রাজ্য কেন্দ্র সরকার লাখো লাখো রুপি ব্যয় করে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার তত্পরতা চালাচ্ছে প্যারা মিলিটারি সদস্যরা। একই সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অস্থায়ী বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্যও কাজ করছে তারা। আসামে পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে হাজার ৪৯২ জনের আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হয়েছে। এতে মারা গেছে অন্তত ১১ জন।

পুরো ভারতই যখন নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং যখন প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ অর্থনীতি চাঙ্গায় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তখন বন্যা রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারের জন্য নতুন উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের লড়াইয়ে ২০ জন নিহত এবং ডজনখানেক আহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

ভারতের বন্দরগুলোতে চীন থেকে আসা পণ্য আটকে দেয়া এবং দেশের বিভিন্ন মহল থেকে চীনা পণ্য বয়কটের ডাকে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার তার ক্ষমতার ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত পার করছে।

বেইজিং নয়াদিল্লির টানাপড়েনের কূটনৈতিক রাজনৈতিক ঝুঁকির চেয়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকি অনেক বেশি। অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত। প্রযুক্তি খাতের শক্তিঘর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চীন ভারত একে অন্যকে সহায়তা করেছে। দুপক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক তিক্ততার নিদর্শন হিসেবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি গ্রেট ওয়াল মোটরসসহ বেশ কয়েকটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে ৬০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন