ছয় প্রস্তাব নিয়ে গভর্নরের কাছে যাচ্ছেন এনবিএফআই এমডিরা

হাছান আদনান

আগে থেকেই তারল্য সংকটে ভুগছিল দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) এর মধ্যে অর্থনীতিতে আছড়ে পড়েছে করোনার ঢেউ। আয়-উপার্জনে ভাটা পড়ায় সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে ব্যাংকের মতোই গত কয়েক মাস ধরে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছেন এনবিএফআই থেকে। এতে আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকট।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাই কঠিন হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। অবস্থায় বেঁচে থাকতে ছয় দফা দাবি তুলেছেন খাতটির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ নির্বাহীরা। দাবি নিয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তারা। এর মধ্যে প্রধান দাবি হলো এনবিএফআইগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের। বৈঠকে দাবির সুরাহা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সভাপতি আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলতে আমরা সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অংশ নিতে চাই। দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের বড় অংশ এনবিএফআইগুলো লালন করেন। খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের ঋণ দিতে হবে। কিন্তু এনবিএফআইগুলোর হাতে নগদ তারল্য নেই। গ্রাহকরা আমানতের টাকা তুলে নিচ্ছেন। গত কয়েক মাসে শত শত কোটি টাকার আমানত খাত থেকে বের হয়ে গেছে। অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করলে প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তারাও উপকৃত হবেন।

বিএলএফসিএর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হবে, তার প্রধান দাবি হলো ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন। দাবিটি পূরণ হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন বিএলএফসিএ সভাপতি।

করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কিছুটা সুরক্ষা দিতে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণ খেলাপি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে কার্যরত সব ব্যাংক  আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, ব্যাংকগুলো এনবিএফআইকে দেয়া ঋণ আমানতের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানছে না। ব্যাংক টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করছে। আবার সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদহার শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ ব্যাংক এনবিএফআইয়ের কাছ থেকে ১২-১৩ শতাংশ সুদ আদায় করছে। বিষয়ে গভর্নরের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছে এনবিএফআই খাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা সবকয়টি প্রণোদনা প্যাকেজে এনবিএফআইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, সিআরআর এসএলআর শতাংশ কমানো, অনাদায়ী ঋণ আদায়ের নতুন তফসিল প্রকাশ, পুনর্গঠনের সময়সীমা বৃদ্ধিসহ পুনর্গঠন নীতিমালা উদারীকরণের দাবি তুলেছে এনবিএফআইগুলো। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিএফআইগুলোর সিআরআর শতাংশ কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এনবিএফআইগুলোর দাবিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ছাড়া খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের বিষয়ে আপত্তি আছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এনবিএফআই খাতের দেখাশোনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ থেকে সংশোধন হতে হবে। জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। খাতে ব্যাংকের চেয়েও অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু কিছু খারাপ প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের দায়ভার সব প্রতিষ্ঠানের ওপরই পড়ছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩৩টি এনবিএফআই। লুণ্ঠনের শিকার হয়ে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়া পিপলস লিজিংকে অবসায়ন প্রক্রিয়া চলছে। তবে সম্প্রতি নতুন করে আরো একটি এনবিএফআইকে লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের সবকয়টি এনবিএফআইয়ের মোট সম্পদ দায় প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন