স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা

করোনার রোগী ছাড়ে ফলোআপ টেস্টের দরকার নেই

জেসমিন মলি

করোনা সংক্রমিতদের হাসপাতাল থেকে ছাড়ার নিয়মে পরিবর্তন এনেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন থেকে পরপর তিনদিন উপসর্গবিহীন থাকলে হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়পত্র পাবেন পরপর ১০ দিন উপসর্গবিহীন থাকলেই তাকে করোনামুক্ত ধরে নেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশনা দিয়েছে।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা ঝোরা স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গাইডলাইনস অন ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অব করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ (কভিড-১৯) ভার্সন . অনুযায়ী রোগীর কাজে যোগদান বা ডিসচার্জ প্রদানে ফলোআপ টেস্টিংয়ের আর প্রয়োজন নেই। এর পরও দেশের বিভিন্ন কভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবরেটরিতে আসা স্যাম্পল এখনো ফলোআপ রোগী থেকে সংগৃহীত হয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে গোচরীভূত হয়। অবস্থায় সার্স কভ- নির্ণয়ের পরীক্ষার নমুনা গাইডলাইন অনুযায়ী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সংগ্রহ টেস্টের জন্য প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হলো।

তবে পরীক্ষা ছাড়াই করোনামুক্ত ঘোষণাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। করোনা চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসক জানান, তারা অনেক করোনা রোগী পেয়েছেন, যাদের উপসর্গ না থাকলেও ভাইরাস কার্যকর থাকে। এমনকি চিকিৎসা নেয়ার ১৪তম দিনেও করোনা পজিটিভ এসেছে, এমন রোগীও পাওয়া গেছে। এজন্য টেস্ট ছাড়া করোনা থেকে মুক্ত এটি কার্যত বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত টেস্ট ছাড়া কোনো রোগীকে করোনা নেগেটিভ বলা যাবে না। অনেক রোগীই আছেন তাদের সে অর্থে করোনার উপসর্গ থাকে না, কিন্তু তারা ভাইরাস বহন করে চলেছেন। তাদের যদি পরীক্ষা ছাড়াই করোনামুক্ত বলা হয়, তাহলে তা অন্যদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে, বিনা মূল্যে থাকা নভেল করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকার বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে আসছে। ফি নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে এলে ২০০ টাকা, আর বাসা থেকে নমুনা দিয়ে টেস্ট করাতে হলে ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। তবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৩০ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু নির্দেশনা দেন। সেসব নির্দেশনার মধ্যে একটি ছিল কভিড-১৯ পরীক্ষা (আরটি-পিসিআর) বর্তমানে পুরোপুরি বিনা মূল্যে সম্পন্ন হচ্ছে, ফলে ব্যয়বহুল পরীক্ষাটির অনেক অপব্যবহার হচ্ছে। লক্ষ্যে পরীক্ষার জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করে চালু করতে হবে। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য একটি ফি চালুর ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয় মার্চ। আর রোগে দেশে প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৮ মার্চ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন