দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পেরিয়েছে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময়। সংক্রমণের গতি শুরুর দিকে কিছুটা শ্লথ থাকলেও সময় যত গড়িয়েছে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ততই বেড়েছে। সামাজিক সংক্রমণের গতি বাড়তে থাকায় মে মাসের শেষ নাগাদ দৈনিক নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশ অতিক্রম করে যায়। চলতি মাসের পুরোটা জুড়েই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের তীব্রতার ভিত্তিতে জোন অনুযায়ী ভাগ করা, লকডাউনসহ নানামুখী পদক্ষেপের পরও এ হার কমানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি মাসের প্রথম দিনে মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। এরপর গোটা মাসজুড়েই এ হার ছিল ২০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ২৭ জুন—২৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিন ২৬ জুন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। সর্বশেষ সাতদিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য দিনের মধ্যে ২৫ জুন মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২৪ জুন ২১ দশমিক শূন্য ৭, ২৩ জুন ২০ দশমিক ৯৪, ২২ জুন ২২ দশমিক ৩৭ ও ২১ জুন ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গতকালও সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ৩ হাজার ৮০৯ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে জানানো হয়। মোট ১৮ হাজার ৯৯টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে এসব সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সে হিসেবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
এর মধ্য দিয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছে ৫৫ হাজার ৭২৭ জন। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ জন।
এ ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯-এ আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে আরো ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকালের অনলাইন বুলেটিনে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এ নিয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩৮।
তিনি জানান, গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ও নারী যথাক্রমে ৩১ ও ১২ জন। তাদের মধ্যে ৩০ জন হাসপাতালে ও ১২ জন বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল একজনকে।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, মৃত ৪৩ জনের মধ্যে ২১ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন খুলনার, দুজন রাজশাহীর, তিনজন সিলেটের, একজন রংপুরের, দুজন বরিশালের ও একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
এ ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এছাড়া এ সময় ৭১-৮০ বছর বয়সসীমার মধ্যে সাতজন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে ১২, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৩, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে সাত, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে এক ও ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সসীমার মধ্যে দুজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।